সূচীপত্র
টিপ ১. এনডি গ্রেড, শক্তিশালী নিউট্রাল ডেনসিটি ফিল্টারস এবং পোলারাইজার
ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে দক্ষতার সাথে এক্সপোজার নিয়ন্ত্রণ এবং ছবিতে বিশেষ ধরণের ইফেক্ট আনার জন্য ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফারগণ অনেক অনেক ধরণের ফিল্টার ব্যবহার করে থাকেন; এই ধরণের ইফেক্ট পোস্ট প্রসেসিং সফটওয়্যার দিয়ে তৈরী করা সম্ভব নয়।যদিও HDR ফটোগ্রাফি এবং ফটোশপ সফটওয়্যার দিয়ে এক্সপোজার ব্লেন্ড টেকনিক ব্যবহার করে ND Grads ফিল্টারের কাজ করা যাবে, কিন্তু, প্রোফেশনাল ফটোগ্রাফারদের কাছে Solid ND filter এবং Polarizing filters এর গুরুত্বপূর্ণ এখনও আছে বিধায় তারা ক্যামেরা ব্যাগে এখনও এই ফিল্টারগুলো রাখেন।
সলিড নিউট্রাল ডেনসিটি (এনডি) ফিল্টার লেন্সের ভিতরে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার আলো প্রবেশে বাধা প্রদান করে ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে লং এক্সপোজার করার জন্য সাটার স্পীডকে সুবিধাজনকভাবে কমিয়ে দেয়।
পানি থেকে আলোর প্রতিচ্ছবি এবং চকচকে পাতার উজ্জ্বল (shiny gloss) কমিয়ে দিয়ে এবং নীল ও সাদা রঙের আকাশের কন্ট্রাস্ট বাড়িয়ে দেয়।
ফটোশপে এই ধরণের ইফেক্ট পোস্ট প্রসেসিং তুলে আনা কঠিন কাজ। বরঞ্চ ক্যামেরা দিয়ে এই কাজগুলো করাতে সত্যিকারের বোদ্ধা ফটোগ্রাফারের কাজ ও পরিচায়ক।
টিপ ২. দিগন্ত রেখা (Horizon) সমান্তরাল রাখুন
ছবিতে দিগন্ত রেখাকে সমান্তরাল রাখতে চেষ্টা করুন। বিশেষ করে যখন সমুদ্রের তীরবর্তী দিগন্ত রেখা, নচেৎ এতে ছবিতে রেশিও নষ্ট হবে।ডিএসএলআর এর মেনু থেকে গ্রীড অ্যাকটিভ করার সুবিধা আছে যা লাইভ ভিউ তে ওভারলে (overlay) আকারে পুরো স্ক্রীনে দেখা যায়। এই গ্রীড দিয়ে দিগন্ত রেখা ভূমির সমান্তরালে আছে কিনা তা নিশ্চিত করা যায়। আবার অনেক বডিতে লাইভ ভিউতে ইলেকট্রনিক লেভেল মিটার সুপার-ইম্পোজ করে দেখার মাধ্যমে এই সুবিধা নেয়ার ব্যবস্থা আছে।
সম্মানিত পাঠক, আপনার ক্যামেরা বডিতে যদি এই সুবিধা না থাকে, তবে ক্যামেরার অটো ফোকাস পয়েন্ট এর সারিকে ভিউ ফাইন্ডারে দেখে মোটামুটি একটা আইডিয়া করে ল্যান্ডস্কেপের দিগন্ত রেখার সাথে ছবির ফ্রেমকে সমান্তরাল রাখার কাজটা সেরে নিতে পারেন।
টিপ ৩. হাইপারফোকাস ফোকাসিং টেকনিক
ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে ঝকঝকে ছবি ক্যাপচারের ক্ষেত্রে ডেপথ অব ফিল্ড বিশাল ভূমিকা রাখে। আমি চাই আমার ছবির সামনের অংশ থেকে শুরু করে সূদূর বিস্তীর্ণ দিগন্ত রেখা পর্যন্ত যা কিছু আছে – সবই যেন শার্প ক্যাপচার করতে পারি।ডেপথ অব ফিল্ড বাড়াতে লেন্সে ছোট অ্যাপারচার নিয়ে ম্যানুয়ালি হাইপারফোকাল দূরত্বে ফোকাস করুন।
এটা হল সে পয়েন্ট, যে পয়েন্টে ফোকাস করলে ফ্রেমের শুরুতে হাইপারফোকাল দূরত্বের অর্ধেক থেকে শুরু করে অসীম দূরত্ব পর্যন্ত ডেপথ অব ফিল্ড পাওয়া যাবে।
টিপ ৪. টেলি লেন্সে ল্যান্ডস্কেপ ছবি তোলা
ল্যান্ডস্কেপ ছবি তোলার কথা উঠলে অবচেতন ভাবে আমাদের হাতে উঠে আসে হাতে থাকা সবচেয়ে ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সটি। কিন্তু, একটি টেলিফটো লেন্সও ক্রিয়েটিভ ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফারের প্রিয় লেন্স হয়ে উঠে।টেলিফটো লেন্স ফ্রেমের সব ইলিমেন্টকে কম্প্রেস করে আনে – ফোরগ্রাউন্ড ও ব্যাকগ্রাউন্ডকে খুব কাছাকাছি মনে হয়। সেই একই ফ্রেম ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সে শট নিলে ফোরগ্রাউন্ড ও ব্যাকগ্রাউন্ড পরস্পরকে সুদূরে দেখা যায়।
বনের মধ্যে গাছ-গাছালির মধ্যে টেলিফটো লেন্স দিয়ে ছবি তুললে ফ্রেমকে খুব আটোসাটো মনে হয়; আর বনের গাছগুলোকে খুব ঘন মনে হয়।
ওয়াইড লেন্সের তুলনায় টেলিফটো লেন্সে খুব ছোট ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল (angle of view) থাকাতে টেলিফটো লেন্সে ল্যান্ডস্কেপ ছবি তোলা সহজ হয়। এই লেন্সে দৃশ্যকে ফ্রেম করা খুব সহজ হওয়াতে স্টং ছবি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
টিপ ৫. HDR ল্যান্ডস্কেপ ফটো
High Dynamic Range (HDR) ফটোগ্রাফির মাধ্যমে ছবির ফ্রেমের প্রতিটি ডিটেইল – শ্যাডো থেকে শুরু করে হাইলাইট পর্যন্ত – ধারন করা যায়। এইচডিআর ছাড়া একটি সিঙ্গেল শটের মাধ্যমে এত্তএত্ত ডিটেইল আনা সম্ভব না।এইচডিআর ফটোগ্রাফিতে সাধারণতঃ বিভিন্ন এক্সপোজারে একাধিক শট নেয়া হয়। শটগুলো ম্যানুয়ালি বা ডিএসএলআরের অটো এক্সপোজার ব্রাকেটিং ফাংশনের মাধ্যমে নেয়া হয়। পরে কম্পিউটারে ডাউনলোড করে ফটোশপ বা লাইটরুম সফটওয়্যার দিয়ে একাধিজ বেস্ট শট একত্রিত করে সিঙ্গেল ছবিতে রূপান্তরিত করা হয়।
মিড লেভেল ও সেমি-প্রো ডিএসএলআর যেমন Canon 5D Mark III বা Nikon D800 বডিতে HDR ফটোকে ব্লেন্ড করার বিল্ট-ইন সুবিধা রয়েছে। তবে, স্পেশালিস্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করলে অনেক বেশি কন্ট্রোল ও ফিচারের সুবিধা পাওয়া যায়।
টিপ ৬. ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে লং এক্সপোজারের ব্যবহার
ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে লং এক্সপোজার ব্যবহার করলে ফ্রেমের মধ্যে থাকা সব ধরনের চলমান ইলিমেন্ট ব্লার হয়ে যায়।ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির সময় কয়েক সেকেন্ডের সাটার স্পীড ব্যবহার করলে – জলপ্রপাত বা নদীর পানির, বা বাতাসে গাছের নড়াচড়া করা পাতা – সবই আপনার ছবিতে ইন্টারেস্টিং ইলিমেন্ট ও ইফেক্ট যোগ করবে।
অনেক স্লো সাটার স্পীড পেতে সাধারণতঃ বেশ ছোট অ্যাপারচার, কম ISO এবং কম আলো প্রয়োজন হয়। অবশ্য আলোকোজ্জ্বল দিনের বেলাতে শুধু এমন সেটিং এ কাজ হবে না, তখন লেন্সের সামনে ND filter যুক্ত করতে হবে।
ND ফিল্টার বিভিন্ন রেঞ্জের শক্তিমাত্রায় পাওয়া যায় এবং লেন্সে লাগানোর পর ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার ND ফিল্টার ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় আলো প্রবেশে বাধা প্রদান করে।
“Lee Filters Big Stopper” এর মত স্ট্রং ND ফিল্টার ব্যবহার করে বেশ লম্বা সময় ধরে এক্সপোজার (Long exposure) নেয়া যায়, যেটা দিয়ে দিনের আলোতেও শুধু কয়েক সেকেন্ড নয়, মিনিটের পর মিনিট এক্সপোজার নেয়ার সুবিধা পাওয়া যাবে।
Big Stopper বা B+W ND110 10-stop ND ফিল্টার ব্যবহার করে অশান্ত ঢেউবিশিষ্ট সমুদ্রের পানিকে শান্ত, মোলায়েম ও স্নিগ্ধ ঢেউ বানিয়ে ফেলা যায়।
টিপ ৭. টিল্ট-শিফট ল্যান্ডস্কেপ
টিল্ট-শিফট ফটোগ্রাফির মাধ্যমে বড় অ্যাপারচারের লেন্সের শার্পনেসের সাথে অনেক বিশাল ডেপথ অব ফিল্ডের সংযোগ ঘটাতে পারবেন; যে ধরণের ডেপথ অব ফিল্ড শুধুমাত্র ছোট অ্যাপারচারের মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে।এটি টিল্ট-শিফট লেন্স ব্যবহার করে করতে হয়। এই লেন্সে “টিল্ট” এবং “শিফট” – উভয়টি (ফোকাসের তলকে নিয়ন্ত্রণ করতে) এবং (ভার্টিক্যালি উচুনিচুকরে) নিয়ন্ত্রন করতে হয়।
বস্তুত, টিল্ট পদ্ধতিতে ফোকাসের অংশকে খুব-স্বল্প গভীরতা দেয়া হয়; ল্যান্ডস্কেপকে দেখতে একেবারে ক্ষুদ্রাকৃতির মডেলের মত মনে হয়।
টিল্ট-শিফট ফটোগ্রাফির একেবারে বাস্তবধর্মী উদাহরণ হল, গাড়ি, নৌকা, ট্রেনের মত এলিমেন্ট এবং উচু কোন পজিশনকে এমনভাবে দেখান যাতে ঐ গাড়িকে বাচ্চাদের ক্ষুদ্রাকৃতির একটি খেলনার মত মনে হয়।
টিল্ট-শিফট লেন্সগুলো সাধারণতঃ খুব ব্যয়বহুল। তবে, আশার কথা হল, ফটোশপে বসে এর ফিল্টার ব্যবহার করে টিল্ট-শিফট ইফেক্ট বানানো যায়। এই টিল্ট-শিফট বেশ বাস্তবের মতই মনে হয়।
টিপ ৮. সাদা-কালো ল্যান্ডস্কেপ
আপনি কি সাদা-কালো ল্যান্ডস্কেপ ছবি তুলতে চাচ্ছেন? তাহলে, রঙ্গিন ছবি তুলুন। আর, ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলবার সময় jpeg এর পরিবর্তে RAW মুডে ছবি তুলুন। এই রঙ্গিন ছবিকে পরবর্তীতে লাইটরুম বা ফটোশপ এর মত ফটো এডিটিং সফটওয়্যারে নিয়ে গিয়ে সাদা-কালো ছবিতে কনভার্ট করা যায়।এই পদ্ধতিতে সাদা-কালো ছবি করলে পুরো প্রক্রিয়ার উপরে আপনার কন্ট্রোল থাকবে। এডিটিং এর মাধ্যমে ছবি কোন কোন অংশে ইচ্ছামত ডজিং বা বার্নিং করে প্রয়োজনমত সাদা বা কালো এর পরিমাণ বাড়ানো, টোনকে স্প্লিট করা, বা পুরো ফ্রেমের কালারকে নিয়ন্ত্রিতভাবে তুলে (pop) আনতে পারবেন।
মনে রাখবেন, যদিও আপনি raw মুডে ছবি তুলছেন, আপনার ডিএসএলআর প্রিভিউ থেকে Monochrome পিকচার মুড সিলেক্ট করুন। এতে যদিও আপনি সাদা-কালো ছবি দেখছেন, তথাপি আপনার মেমোরি কার্ডে রঙ্গিন ছবি জমা হচ্ছে।
টিপ ৯. প্যানোরামা
ল্যান্ডস্কেপ ছবিতে ভিউয়ের বিশাল এলাকা ক্যাপচার করতে আল্ট্রা-ওয়াইড লেন্স ব্যবহার না করে, প্যানোরামা মুডে ছবি তুলার চেষ্টা করছেন কি?প্যানোরামা মুডে ছবি তুলতে, ডিএসএলআরকে ট্রাইপডের উপরে স্থাপন করে, ওভারল্যাপিংভাবে পাশাপাশি অনেকগুলো শট নিয়ে সিঙ্গেল ফ্রেমের মধ্যে আনতে হয়। চওড়াতে অনেক বড় লম্বা ছবি পেতে হলে তখন আনুভূমিকভাবে শট নিতে হবে।
যদিও প্যানারমিক শট নেওয়ার জন্য স্পেশালিষ্ট ট্রাইপড হেড পাওয়া যায়, কিন্তু, এটা সব সময় প্রয়োজন হয় না, কারণ; আপনি যদি বিশেষ ধরণের সফটওয়্যার ব্যবহার করেন যেখানে ছবি অটোম্যাটিক্যালি স্টিচ করা যায়। সম্প্রতি ফটোশপ এর Photomerge নামে একটি অ্যাপ রয়েছে, যেটি এই কাজের জন্য এক্সপার্ট।
যখন প্যানোরামা বানানোর জন্য অনেকগুলো শট নিবেন, তখন ম্যানুয়াল সেটিং অর্থাৎ এক্সপোজার, ফোকাস এবং হোয়াইট ব্যালান্স – সবই ম্যানুয়াল ব্যবহার করবেন, যাতে সবগুলো সেটিং পুরো ফ্রেম জুড়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থায় থাকে।
টিপ ১০. ইনফ্রারেড ফটো
ফটেশপ দিয়ে যদিও ইনফ্রারেড ইফেক্ট তৈরী করা যায়, তবে নিজে নিজে ক্যামেরা দিয়ে এই ইফেক্ট তৈরী করার মতো মজা আর নাই! ইনফ্রারেড ল্যান্ডস্কেপ সাদা-কালো বা রঙ্গীন হতে পারে; এতে থাকতে পারে বৈচিত্রপূর্ণ আবহ; থাকতে পারে ইঙ্গিতপূর্ণ অর্থ।ইনফ্রারেডের বেস্ট শট পেতে পুরাতন ডিএসএলআর থেকে এনফ্রারেড বানিয়ে নেয়া যেতে পারে। স্মরণ রাখতে হবে, একবার ইনফ্রারেড কনভার্সন হয়ে যাওয়ার পর ঐ বডিতে আর রেগুলার ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না।
বরঞ্চ এটাই ব্যবহারে সুবিধা বেশি। কারণ হল, প্রতিবার ইনফ্রারেড ছবি তুলতে সেটিং নিয়ে আন-কনর্ভারটেড ক্যামেরা বডিতে প্রতিবার সেটিং নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়।
টিপ ১১. মিনিমালিস্ট ল্যান্ডস্কেপ
মিনিমালিস্ট ছবিগুলো সাধারণত: সাদা-কালোতে ভালো লাগে। হরাইজন্টাল শট, সাথে Neutral Density (ND) ফিল্টারের লং এক্সপোজার। মজার ব্যাপার হল, এই ধরণের ছবিতে যে অংশ ছবিতে রেখেছেন তার চাইতে যে অংশ ছবিতে রাখেন নাই, তার জন্য দু:খ লাগে বেশি।টেলিফটো জুম লেন্স দিয়ে মিনিমালিস্ট ল্যান্ডস্কেপ ছবিতে ইন্টারেস্টিং ইলিমেন্ট নিয়ে আসা যায়। একাকি একটা গাছ দাঁড়িয়ে আছে, তা এক পেজা তুলার মত মেঘমালা, বা দূরে একাকি দাঁড়ানো একটি পাহাড় – দেখে দাঁড়িয়ে যান – এখানেই উঠে আসবে আপনার পরবর্তী মিনিমালিস্ট ল্যান্ডস্কেপ ছবিটি। কুয়াশা, তুষার এবং বিশেষত্বহীন আকাশ নিয়ে হয়ে যেতে পারে এমন ধরণের একটি সুন্দর মিনিমালিস্ট ছবি।
0 Comments