ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি অ,আ

 

টিপ ১. ম্যানুয়াল ফোকাস

ম্যাক্রো ফটো তুলবার সময় অটো-ফোকাস বন্ধ রাখুন। ম্যানুয়াল শটে ক্লোজ-আপ ডিটেইলস নেয়ার সময় ডেপথ অব ফিল্ড (depth of field) কয়েক মিলিমিটারের নেমে আসে। এ সময় একেবারে সঠিক স্থানে ফোকাস করাটা খুবই জরুরী।
ম্যানুয়াল ফোকাস সহজতর করতে ক্যামেরার লাইভ ভিউ ব্যবহার করুন। সাবজেক্টের যে অংশকে লাইভ ভিউতে জুম করুন এবং সেই স্পটে ফোকাস রিং দিয়ে ম্যানুয়ালি ফোকাস করুন – প্রয়োজনমত জুম ও ফোকাস করে আপনার পছন্দের অংশটি একেবারে সঠিকভাবে ফোকাস করা সম্পন্ন করুন।
ফোকাস করতে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ ফোকাসের রেজর-শার্প ও শুধু-শার্প এর মধ্যে পার্থক্য সামান্যই। এছাড়াও প্রয়োজনে ট্রাইপড ব্যবহার করতে হবে, কারণ ক্যামেরার সামান্য একটু নড়াচড়া করার কারণে “পয়েন্ট অব ফোকাস” সড়ে যেতে পারে।

টিপ ২. বেস্ট অ্যাপারচার নির্ধারণ

সাবজেক্টের সামনে ও পিছনের কিছু অংশ যা আপনি শার্প রাখতে চান – এই অংশকে ফটোগ্রাফির ভাষায় ডেপথ অব ফিল্ড বলে। ডেপথ অব ফিল্ড বাড়াতে হলে ছোট অ্যাপারচার বা বড় f নাম্বার রাখতে হয়।
এ জন্য ক্যামেরার বডিতে ডায়াল ঘুরিয়ে Aperture Priority মুড সিলেক্ট করুন, কারণ, এই মুডে আপনি খুব সহজে এ্যাপারচারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ছোট এ্যাপারচার সিলেক্ট করার জন্য ডায়াল ঘুরিয়ে f/16 থেকে শুরু করে f/22 এর মিধ্যে যে কোন একটি এ্যাপারচার সিলেক্ট করুন।
লেন্সের একেবারে সর্বোচ্চ এফ/নাম্বার সিলেক্ট না নেয়ায় ভাল; কারণ এতে লেন্সের ডিফ্র‍্যাকশন (diffraction) এর কারণে ছবি সফট হয়ে যায়। (সর্বোচ্চ এফ/নাম্বারে লেন্সে আলো প্রবেশের পরে এর ব্লেডের কারণ আলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেঁকে ছড়িয়ে পড়ে। আলোর এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে ডিফ্র‍্যাকশন বলে)।
যদি গ্রহনযোগ্য সর্বোচ্চ এ্যাপারচার ব্যবহার করে সিঙ্গেল শটে ছবিতে আশানুরূপ শার্পনেস না আসে, সে ক্ষেত্রে “ফোকাস স্ট্যাকি” ব্যবহার করতে হবে। এই পদ্ধতিতে সাবজেক্টের বিভিন্ন অংশের অনেকগুলো শট নেয়া হয়। ছবিগুলোকে পরে ফটোশপে নিয়ে ব্লেন্ড করে শার্পনেস বাড়ানো হয়।

টিপ ৩. ডেপথ অব ফিল্ড প্রিভিউ ব্যবহার করা

অপটিক্যাল ভিউ ফাইন্ডার দিয়ে আমরা যে ইমেজ দেখি তা লেন্সের সবচেয়ে বড় অ্যাপারচার দিয়ে দেখলে যেমন দেখায়, তেমনভাবে দেখায়। যদিও এইভাবে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছবিটা আমরা দেখে থাকি, কিন্তু ছোট অ্যাপারচার ব্যবহার করে ছবি তুললে ছবির ডেপথ অব ফিল্ড বুঝতে পারা যায় না।
ছবির কোন অংশ শার্প আসছে আর কোন অংশ ব্লার হচ্ছে, তা বুঝবার জন্য ক্যামেরার সাথে একটি “ডেপথ অব ফিল্ড প্রিভিউ” বাটন (depth of field preview button) দেয়া হয়েছে।
এই বাটন প্রেস করলে আপনার লেন্সে যে অ্যাপারচার সেট করেছেন, সেই অ্যাপারচারে ছবি কেমন দেখা যাবে সেটা দেখা যাবে। ইমেজটা দেখতে একটু কালো দেখাবে। আর, এই পরিবর্তনের সাথে নিজেকে অভ্যস্ত করে ফেলতে হবে।
ডেপথ অব ফিল্ড প্রিভিউ বাটন লাইভ ভিউতেও কাজ করে। আর লাইভ ভিউ’তে ম্যাগনিফিকেশন কন্ট্রোল ব্যবহার করে সাবজেক্টের কোন অংশের ফোকাস চেক করা প্রয়োজন হলে, সেখানে জুম করে বড় করে নিয়ে ফোকাস চেক করার পাশাপাশি অপটিক্যাল ভিউ ফাইন্ডার দিয়ে এই ডেপথ অব ফিল্ড বাটনটি ব্যবহার করে ছবির ডেপথ অব ফিল্ড সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

টিপ ৪. প্যারালাল ক্যামেরা ট্রিক

আপনার সাবজেক্টের সাথে ক্যামেরার পজিশন সমান্তরাল হওয়া জরুরী। কারণ, সাবজেক্টের সামনে ও পিছনে ডেপথ অব ফিল্ড খুব স্বল্প এলাকা জুড়ে থাকাতে এই ব্যাপারটি ভালভাবে অনুধাবন করা জরুরী।
গাছের পাতা বা পালকে থাকা জটিল প্যাটার্নযুক্ত ফ্ল্যাট সাবজেক্টের শুটিং এর সময় এই ব্যাপারা আরও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। সাবজেক্টের যে অংশ শার্প হওয়া প্রয়োজন, সে অংশের সাথে ক্যামেরা প্যারালাল না থাকলে, ফোকাসের ঐ অংশটি ব্লার হয়ে যাবে; তাতে ছবির মূল আবেদনটি আর থাকবে না।

টিপ ৫. কম্পোজিশনের রুল না মেনে শ্যুট করুন

ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিতে সব সময় ছোট অ্যাপারচারে ছবি তুলতেই হবে, এমন না – প্রয়োজনের খাতিরে নিয়মের বাইরে গিয়ে লেন্সের সর্বোচ্চ অ্যাপারচার ব্যবহার করে ছবি শ্যুট করতে হতে পারে।
সাবজেক্টের একটি অংশের উপরে ওয়াইড অ্যাপারচার ব্যবহার করে ফোকাস করা হয় – যাতে ফোকাস করা অংশের সামনে ও পিছনের অংশে ক্রিমের মত মোলায়েম ব্লার তৈরী হয় – সাধারণতঃ এটাই ফুড ফটোগ্রাফির প্রচলিত ও জনপ্রিয় শ্যুটিং স্টাইল।
আবার, ফুলের ফটোগ্রাফিতে অনেক সময় লেন্সকে সম্পূর্ণভাবে ডিফোকাস করে ছবিকে ব্লার করা ও ফ্রেমকে দৃষ্টিনন্দন বোকেহ তৈরী করার ট্রিকও অনেকে প্রয়োগ করে থাকেন।

টিপ ৬. শার্প ফটো পাওয়ার টিপস

আপনারা জানেন যে, ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিতে ছোট অ্যাপারচার (বড় f নাম্বার) ব্যবহার করলে লেন্সের মধ্যে দিয়ে কম আলো প্রবেশ করে। আর এতে সাটার স্পীড কমে যায় এবং বেশী সময় ধরে এক্সপোজার দিতে হয়।
এই রকম পরিস্থিতিতে হালকা ঝাকুনি বা নড়াচড়াতে, এমনকি, ক্যামেরার মধ্যে থাকা মুভিং মিরর (moving mirror) এর কারণে ছবি ব্লার হয়ে যাওয়ার আশংকা বৃদ্ধি পায়।
ছবি ব্লার হওয়ার ঝামেলা থেকে বাঁচতে, ক্যামেরার মিরর লক-আপ (mirror lock-up) ফাংশন ব্যবহার করুন, অথবা, লাইভ ভিউ মুড ব্যবহার করুন – লাইভ ভিউতে মিরর অটোমেটিক্যালি লক-আপ হয়ে থাকে। সাবজেক্টের শট রেডি হয়ে ফিংগার ব্যবহার না করে রিমোট দিয়ে শাটার রিলিজ করুন, অথবা, ক্যামেরার সেলফ-টাইমার (self-timer) ব্যবহার করুন।
প্রয়োজনে ISO বৃদ্ধি করে সাটার স্পীড বাড়ানো যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ক্যামেরার বডি ভেদে ISO ব্যবহারে ছবিতে গ্রেইনের পরিমাণ কেমন আসে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সাধারণতঃ ISO কে ৮০০ এর নিয়ে রাখলে সবচেয়ে পরিষ্কার ছবি পাওয়া যায়।

টিপ ৭. ঘরে তৈরী রিফ্লেক্টর ব্যবহার করুন

অনেক সময় ক্ষুদ্র সাবজেক্টের উপরে ভালভাবে আলো ফেলানোটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। বিশেষ করে ছোট ম্যাক্রো লেন্স দিয়ে লাইফ-সাইজ শট নেয়ার সময় – এমন সময় ক্যামেরাকে সাবজেক্টের খুব কাছে নিয়ে যেতে হয় এবং ক্যামেরার অবস্থানের কারণে ন্যাচারাল আলো প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এ সময় হাতের কাছে একটি রিফ্লেক্টট থাকলে খুব সহজেই এই সমস্যার সমাধান করে ফেলা যায়। রিফ্লেক্টর কিন্তু নিজে হাতে তৈরী করে নেয়া যায়। এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল একটা কার্ডবোর্ডের উপরে সাট করে লাগিয়ে নিলেই হবে। আবার, ফুটবলের উপরে ফয়েল লাগিয়ে আলো রিফ্লেক্ট করলে সাবজেক্টের উপরে সুন্দর ডিফিউজ কোয়ালিটির আলো পড়ে।

DIY alluminium foil reflector
অ্যলুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে হাতে তৈরী রিফ্লেক্টর
এবার, আপনার রিফ্লেক্টরটি সাবজেক্টের শ্যাডো পড়া সাইডে নিয়ে বসিয়ে আলো ফেলুন। দেখবেন, আগে অন্ধকারের কারণে সাবজেক্টের যে ডিটেইলগুলো ধরা পড়ছিল না, এবার তারা সুন্দর করে ক্যামেরায় ধরা পড়ছে।

টিপ ৮. বড় ম্যাক্রো লেন্সের ব্যবহার

বড় ফোকাল লেন্সযুক্ত ম্যাক্রো লেন্সগুলোতে ছোট ম্যাক্রো লেন্সের মতই ১ঃ১ সাইজের লাইফ-সাইজ ছবি নেয়া যায়, কিন্তু, বড় ম্যাক্রো লেন্সগুলো দিয়ে অনেক দূর হতে সাবজেক্টের ছবি তোলা যায়।
সাবজেক্টের খুব কাছে যেতে হয় না, তাই সাবজেক্টের আশে-পাশে ফাঁকা জায়গাতে ফ্ল্যাশগান বা অন্যান্য লাইট সোর্সগুলোকে স্বাচ্ছন্দ্যে বসানো যায়।
আর এ কারণে বড় ফোকাল লেন্থের ম্যাক্রো লেন্সগুলো ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিতে আদর্শ লেন্সে পরিণত হয়েছে; কারণ, এতে পোকা-মাকড় ও কীটপতঙ্গকে বিরক্ত না করে দূর থেকে শট নেয়া যায়।

টিপ ৯. সকাল-সকাল শ্যুট করুন

আউটডোরে ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি করার প্ল্যান থাকলে, ভোরে উঠতে অ্যালার্ম ঘড়ি ব্যবহার করুন। ফটোগ্রাফিতে ভোরে উঠা জরুরী, এই সময় সূর্যের আলোর প্রখরতা কম থাকে, আলো ডিফিউজ অবস্থায় থাকে এবং আলোতে সব রঙের সমাহার (spectrum) থাকে – শুধু এ জন্যই নয় – দিনের এ সময় বাতাসের গতিবেগও সবচেয়ে কম থাকে।
বাগানে ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিতে বহমান বাতাস বিশাল ঝামেলা তৈরী করে। ফুল, পাতা, মাকড়শার জাল এবং অন্যান্য মনোহর সাবজেক্টের ক্লোজ-আপ ফটোগ্রাফির সময় স্লো সাটারের স্পীডের সাথে বাতাস থাকার কারণে ছবি ব্লার আসতে পারে।
লম্বা কাণ্ডযুক্ত গাছে ফুলের ম্যাক্রো ছবি তুলবার সময় বিশেষ ধরণের সাপোর্ট সিস্টেম ব্যবহার করতে পারেন। স্ট্যান্ডের সাথে লাগানো এক ধরণের ক্ল্যাম্প বা ক্লিপ দিয়ে ফুলের নীচে কাণ্ডের সাথে ক্ল্যাম্পটা লাগিয়ে দিলে ফুলের নড়াচড়া বন্ধ করা যায়।

Clamp
ক্ল্যাম্প দিয়ে ফুলকে আটকিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে বাতাসে নড়াচড়া না করে
শ্যুটের সময় এমন কোন সিস্টেম সাথে না থাকলে, আশে-পাশে থাকা কোন কঞ্চি দিয়ে ফুল গাছের সাথে বেধে দিয়ে ভালভাবেই কাজ চালানো যায়।

টিপ ১০. নিজের ম্যাক্রো ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরী করে রাখুন

আমরা জানি, ব্যাকগ্রাউন্ডের কোয়ালিটির উপরে একটা ভাল ম্যাক্রো ছবি সাফল্য পেতে পারে; আবার ছবিটাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। লম্বা ফোকাস লেন্থের ম্যাক্রো লেন্সের সাহায্যে ফ্রেমের ব্যাকগ্রাউন্ডে কি থাকবে, না থাকবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন; কিন্তু, ছবির রঙ নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং আউট-ফব-ফোকাস হাইলাইটের মত বিষয় অনেক সময় পরিহার করা যায় না।
এ ধরণের পরিস্থিতি সামলাতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে নিজের প্রিন্টেড ব্যাকগ্রাউন্ডের কালেকশন গড়ে তোলাটা খুবই জরুরী।

Backgrounds printed on matte paper
ম্যাট পেপারের উপরে প্রিন্ট করা ব্যাকগ্রাউন্ড
কালার্ড কার্ডের শিট (colored card sheet), ব্লারড ন্যাচারাল ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রিন্টেড ম্যাট শিট (blurred natural background printed matte sheet) – এমনকি সিঙ্গেল কালারের কাপড় ব্যাকগ্রাউন্ডের ব্যবহার করেও সাবজেক্টের শট নিলে বেশ সফট ব্যাকগ্রাউন্ডযুক্ত ছবি পাওয়া যায় যা বেশ ফুটে উঠে ও দর্শকদের চোখে দৃষ্টিনন্দন হিসাবে ধরা দিতে পারে।

টিপ ১১. বাসাতে ম্যাক্রো স্টুডিও তৈরী করা

বাসাতে ম্যাক্রো ফটোগ্রাফির একটা বিশেষ সুবিধা হল, এতে খুব বেশী জায়গার প্রয়োজন হয় না। একটা টেবিল, বা বাসার ওয়ার্কশপের এক কর্নারের জায়গা প্রয়োজন হবে। প্রয়োজন হবে একটা ট্রাইপড, যাতে সাবজেক্টের ঝাকুনিমুক্ত শট নিতে পারেন।

Track dolly rail slider
ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিতে ব্যবহৃত রেইল স্লাইডার
আরেকটু উচ্চাভিলাষী হতে চাইলে, কিনে নিতে পারেন একটা রেইল। এর উপরে ক্যামেরা সেট করে নিয়ে রেইলের সাথে থাকা স্ক্রু ঘুরিয়ে অত্যন্ত সুক্ষভাবে ক্যামেরাকে আগে-পিছে করে ফোকাস ঠিক করা যায়।

Post a Comment

0 Comments