পোট্রেট ফটোগ্রাফির বেসিক
এই লেখার শুরুতে আমরা অ্যাপারচার (aperture), সাটার স্পীড ও কি ধরণের লেন্স ব্যবহার করতে হবে – সে সম্পর্কে জানব; এরপরে জানব ফোকাসিং ও কম্পোজিশন টেকনিক নিয়ে। নেচারাল আলো ও রিফ্লেকটর ব্যবহার করে কিভাবে পোট্রেটকে ড্রামাটিক্যালি পরিবর্তন করে আপনার তোলা ছবিকে আরও সুন্দর করে তুলব, তার আলোচনা একের পর এক চলে আসবে।তার পরের প্যারাগুলোতে আমরা পোট্রেট ফটোগ্রাফির অ্যাডভান্সড কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করব। এর মধ্যে রয়েছে, স্পীডগান এবং অন্যান্য এক্সেসরিজের ব্যবহার করে কিভাবে পোট্রেট ফটোগ্রাফিতে সুবিধা আদায় করে নিতে পারি।
আপনি যদি পোট্রেট ছবি তুলতে এখন আপনার বন্ধুর সামনে বসে থাকেন, বা কোন ফ্যামিলি পোট্রেট তুলবার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, বা, কোন পশ ফটোস্টুডিওতে মডেলগ্রাফির জন্য অপেক্ষায় আছেন, বা স্থানীয় পার্কে ফটোশ্যুটে এসে থাকেন – তবে আমি কনফিডেন্ট যে, আপনার এই টিপ্সগুলো ভালই কাজে লাগবে।
১. এক্সপোজার কম্পেনসেশন
(Exposure compensation) কখন ব্যবহার করবেন
মাল্টি-জোন বা ম্যাট্রিক্স মিটারিং এর অসুবিধা হল, এটা পুরো ফ্রেমের এক্সপোজার রিডিং এর এভারেজ ক্যালকুলেশন করে এবং এই ক্যালকুলেশনটি মিডটোনের উপরে ভিত্তি করে হিসাব করে। মিডটোন হল, কালো ও সাদার মধ্যবর্তী একটি মান।
সব সময় এই ক্যালকুলেশন সঠিকভাবে কাজ করে না। দৃশ্যত: যখন কোন ফ্রেমের মধ্যে একটা বড় অংশে উজ্জ্বল আলো বা/এবং গাঢ় অন্ধকার থাকে, তখন মাল্টি-জোন বা ম্যাট্রিক্স মিটারিং সিস্টেম ফ্রেমের এক্সপোজারের সঠিক রিডিং বের করতে পারে না।
পোট্রেট শুট্যিং এর সময়, ফর্সা রঙের স্কিন টোন থেকে এক্সপোজার নিলে ক্যামেরা এক্সপোজারের ভুল রিডিং নেয় এবং ছবিকে আন্ডার-এক্সপোজ করে ফেলে। ফর্সা কোন সাবজেক্টের ফুল-ফেস ছবি নিতে, অথবা ছবির বড় অংশ জুড়ে সাদা রঙ থাকলে; এই পরিস্থিতিতে পরবেন। মেকআপ দেয়া কনের ছবি তোলা এর বড় উদাহরণ হতে পারে।
ক্যামেরার এক্সপোজার কম্পেনসেশন কন্ট্রোল ব্যবহার করে ছবির এই এক্সপোজার বিভ্রাট ঝটপট ঠিক করে নেয়া যায়।
আন্ডার-এক্সপোজ সাবজেক্টের মুখাবয়ব উজ্জ্বল করতে এক্সপোজার কম্পেনসেশন ডায়াল পজিটিভ মানের দিকে ঘুরিয়ে +1 স্টপ এ এনে একটা শট নেন। শটটি দেখে যদি মনে করেন আলো আরও লাগবে, ডায়াল ঘুরিয়ে আলো আরও বাড়িয়ে নিন।
২. অ্যাপারচার নিয়ে দু’টি কথা
পোট্রেট ছবির জন্য বেস্ট প্র্যাকটিস হল “শ্যালো ডেপথ অব ফিল্ড” (shallow depth of field) ব্যবহার করা; অর্থাৎ লেন্সের এ্যাপারচারকে যতটা পারা যায় খুলে দেয়া, বা অন্য ভাষায় বললে, বড় অ্যাপারচার ব্যবহার করা। f/2.8 থেকে f/5.6 অ্যাপারচারে ছবি তুললে সাবজেক্টের পিছনে খুব মোলায়েম ব্লার হবে এবং সাবজেক্ট ছবির ফ্রেমে অন্যান্য এলিমেন্ট থেকে সুন্দরভাবে আলাদা (stand out) হয়ে যাবে।
সহজে ডেপথ অব ফিল্ড নিয়ন্ত্রনের জন্য Aperture Priority মুডে ব্যবহার করুন। এই মুডে আপনি শুধু এ্যাপারচার সেট করবেন; আপনার ক্যামেরা আপনার হয়ে নিজে নিজে সাটার স্পীড ও ISO হিসাব করে সঠিক এক্সপোজার দিয়ে ছবি তুলে দিবে। Fire and forget. আপনি খালি ক্লিক করবেন। মজার না!
স্পেশালিস্ট লেন্সগুলোতে সাধারণত: f/1.4, f/1.8, বা f/2.8 এর মত অনেক বড় অ্যাপারচার থাকাতে এগুলো দিয়ে তোলা ছবিতে খুব ভাল ব্লার পাওয়া যায়।
৩. সাটার স্পীড সেটিং
ক্যামেরার সাটার স্পীড সেট করার সময় ক্যামেরার ফোকাল লেন্থ সবসময় মাথায় রাখতে হবে। কারণ, ফোকাল লেন্থের সাথে সঠিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ সাটার স্পীড ব্যবহার না করা হলে হাতের কাঁপুনিতে ছবি ব্লার হয়ে যাবে।সাটার স্পীড সেট করার নিয়ম হল: ফোকাল লেন্থ যত হবে সাটার স্পীড তার চাইতে বেশী রাখার চেষ্টা করতে হবে। যেমন: 200mm ফোকাল লেন্থের জন্য অন্তত: 1/250sec বা তার চেয়ে বেশী সাটার স্পীড রাখতে হবে।
এই হিসাব অনুযায়ী ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সে আপনি স্লো সাটার স্পীড ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন: 18mm ফোকাল লেন্থে 1/20sec সাটার স্পীড ব্যবহার করা যাবে।
কিন্তু, সাবজেক্ট যদি ছোটাছুটি করে, তখন এমন স্লো সাটার স্পীড দিয়ে ছবি তোলা অসম্ভব হয়ে পড়বে। কিছু ক্যামেরার বডিতে বিল্ট-ইন ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার রয়েছে; যেগুলোতে নাই সেখানে লেন্সের “ভাইব্রেশন কন্ট্রোল” ব্যবহার করে এমন স্লো সাটার স্পীডে ছবি তোলা যেতে পারে।
লেন্সে ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন টেকনোলজি (ক্যানন লেন্সে IS বা নিকন লেন্সে VR) আছে, তা অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত। ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন ব্যবহার করে আলো স্বল্পতার জন্য কম সাটার স্পীডেও পিন-শার্প ছবি তোলা সম্ভব।
৪. ISO বাড়ান
পোট্রেট ফটোগ্রাফি করার সাবজেক্ট অনেক নড়াচড়া করেন, বা চোখের পাতা বন্ধ করে আবার খোলেন, বা মুখের এক্সপ্রেশন বা হাসির স্টাইল একেকবার একেক রকম করে ফেলেন। সবচেয়ে খারাপ উদাহরণ হল, ছবি তোলার পরে দেখা গেল, মাথার উপরের অংশ কেটে গেছে বা এমনভাবে ফ্রেম বেঁকে বা কেটে গেছে যে, ফ্রেমটা থেকে মানসম্মত ছবি পাওয়া যাবে না।এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ও ছবির মোশন ব্লার এড়াতে ক্যামেরার ISO ডায়াল ঘুরিয়ে ISO বাড়িয়ে দিন।
এতে আপনি ক্যামেরার ঝাঁকুনি এড়িয়ে শার্প ছবি তুলতে পারবেন। সাধারণত পোট্রেট ছবি তুলতে ট্রাইপড ব্যবহার করা হয়। আর, ISO বাড়ানোর ফলে সাটার স্পীড বেশি পাওয়ায় এখন আপনি বেশ কিছুটা সুবিধা পাবেন।
Aperture Priority মুডে লেন্সে ওয়াইড এ্যাপারচার ব্যবহার করার সময় সাটার স্পীড বাড়াতে সিম্পলি ISO রিডিং ১০০ থেকে ৪০০ এর মধ্যে (কথার কথা, প্রয়োজনে আরও) রাখুন।
ঘরে বা বাহিরে, যেখানেই শুট করেন না কেন, আলো কম থাকলে ISO এর ভ্যালু ১৬০০, ৩২০০, বা ৬৪০০ পর্যন্ত বাড়িয়ে নিতে পারেন। ISO বাড়লে ছবিতে নয়েজ সৃষ্টি হয়। তবে, ব্যবহারের উপযোগী নয় এমন ব্লারযুক্ত ছবির চাইতে ছবিতে কিছুটা নয়েজ গ্রহনযোগ্য। গিয়ার অনুযায়ী ISO এর মাত্রা এমনভাবে বাড়াতে হবে, যাতে নয়েজের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকে।
৫. লেন্স চয়েস
পোট্রেট ফটোগ্রাফিতে কি ধরনের লেন্স ব্যবহার করছে, তা আপনার ছবিতে বিশাল একটা ফ্যাক্টর। পোট্রেটের সাথে পারিপার্শ্বিক অবস্থাতে ফ্রেমে আনতে হলে একটা ওয়াইড-এঙ্গেল লেন্স আবশ্যক। ওয়াইড-এঙ্গেল লেন্সে নীচু হয়ে শট নিয়ে সাবজেক্টকে বাস্তবের থেকে বড় দেখায়। এ ধরনের ট্রিক ছবিতে অন্য রকম একটা মাত্রা এনে দেয়; ছবির পারস্পেকটিভ পরিবর্তন করে দেয়।তবে, ওয়াইড-এঙ্গেল লেন্স দিয়ে ছবি তুলবার সময় সাবজেক্টের খুব কাছে যাবেন না, কারণ, এতে লেন্সের ডিসটরশন (distortion) এর কারণে সাবজেক্টের চেহারায় কিছু বিকৃতি দেখা দিতে পারে, যেটা ফটোগ্রাফার ও ক্লায়েন্ট – কারও জন্যই খুব একটা সুখকর নয়।
ওয়াইড-এ্যাঙ্গেল শট থেকে আরও ক্রিয়েটিভ কিছু বের করতে চান! ছবি তুলবার সময় ক্যামেরাটা একটু অ্যাঙ্গেল করে ছবি তুলুন।
মিডিয়াম টেলিফটো লেন্স, 85mm বা 105mm, ব্যবহারের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, এই শটে আপনার মডেল হলেন আপনার মূল বিবেচ্য বিষয়। কিন্তু, ব্যাকগ্রাউন্ডে কি ইলিমেন্ট রাখছেন সেটাও কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ছবিতে মডেলের পিছনে অবস্থতি সিঁড়িগুলো আউট-অব-ফোকাস দেখাচ্ছে – তারপরেও কিন্তু তা ছবিতে নতুন একটা ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্টর যুক্ত করেছে।
চমকে দেয়ার মত পোট্রেট ছবি তুলবার সবচেয়ে মোক্ষম লেন্স হল 70-200 f/2.8 টেলিফটো লেন্স। সাবজেক্টকে জুম করে কাছে নিয়ে এসে ফোকাস করতে এই লেন্সের রয়েছে অবিশ্বাস্য ক্ষমতা; আর এটাই আপনাকে ফ্রেম থেকে সাবজেক্টের সামনে ও পিছনের সব ডিসট্রাকশন দূর করতে সাহায্য করবে।
ফোকাসিং এবং ফ্রেমিং
৬. ক্রিয়েটিভ কম্পোজিশন
ভাল কম্পোজিশন খুঁজে বের করার জন্য সময় নিন। এ কাজে অলসতা করা যাবে না। অনেক সময় শট নেওয়ার সময় ফটোগ্রাফাররা একটু সময় থমকে যান, চিন্তা করতে থাকেন, তিনি কি পোট্রেটের সাথে পারিপার্শ্বিক যা আছে সব সব ফ্রেমের শট নিবেন, না কি শুধু মাত্র সাবজেক্টের টপ শট নিবেন।এ ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হল, জুম করে সাবজেক্টকে ফ্রেমের বেশির ভাগ অংশ রাখুন। আর, সাবজেক্টকে ফ্রেমের এক দিকে রাখুন, ক্যামেরার লেন্সের দিকে তাকাতে বলুন, সাবজেক্টকে বামে রাখলে ডানে দুই-তৃতীয়াংশ ফাঁকা রাখুন; আর, সবশেষে অ্যাপারচার বড় রেখে সাবজেক্টের শট নিন। এতে সাবজেক্টের পিছনে শ্যালো ডেপথ অব ফিল্ডের কারণে ব্যাকগ্রাউন্ড মসৃন ঘোলাটে হয়ে সাবজেক্টকে প্রমিনেন্ট করে উপস্থাপন করবেন।
ছবি তুলবার সময় কম্পোজিশনের এই ধরনের খুঁটিনাটি ডিটেইলসহ ফ্রেমকে নান্দনিকভাবে উপস্থাপনের জন্য চাই নিরন্তর অনুশীলন। দেখবেন, এক সময় আপনার তোলা পোট্রেট ছবিগুলো ক্লায়েন্টের মনে সাড়া ফেলতে শুরু করবে।
৭. মডেলের সাথে সহজ সম্পর্ক গড়ে তুলুন
সাবজেক্টের সাথে বন্ধুত্বপূর্ব ও সহজ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এতে ফাইনাল ছবিতে সাবজেক্টের ন্যাচারাল এক্সপ্রেশন পাবেন। শুটিং শুরুর আগে এক কাপ চা বা কফি পান করতে করতে সাবজেক্টের সাথে কথাবার্তা বলুন; আপনি কিভাবে ফটোশুট করতে চান সে সম্পর্কে তাকে ব্রিফ করুন। সাবজেক্টকে পরিবেশের সাথে অ্যাডজাস্ট হতে সময় দিন।আর, ফটো নেয়া শুরু করার পর থেকে শুটিং স্টাইল পরিবর্তন করার প্রতিটা ধাপে মডেলকে বুঝিয়ে বলুন, আপনি আসলে কিভাবে ছবিটা নিতে চাচ্ছেন, মডেলকে কিভাবে পোজ দিতে হবে।
প্রয়োজনে একটা শট নিয়ে মডেলকে ক্যামেরার স্ক্রীনে দেখিয়ে তাকে বুঝিয়ে বলুন তার কোথায় পোজ পরিবর্তন করতে হবে। ফটোগ্রাফারের পক্ষ থেকে এই রকম বন্ধুত্বপূর্ণ নির্দেশনা পেয়ে মডেল আরও কনফিডেন্স পাবেন এবং তার কাছে থেকে স্বত:স্ফূর্ত সহযোগিতা পাবেন।
৮. রিফলেক্টর (Reflector) ব্যবহার করুন
অনেক রিফলেক্টরের উভয় পাশেই আলো প্রতিফলনের ব্যবস্থা রয়েছে, কতক আবার ডিটাচেবল কভার সিস্টেম – এতে প্রয়োজনমত সাদা, সিলভার বা গোল্ডেন রঙের কাভার লাগিয়ে ব্যবহার করা যায়। সূর্যের আলোকে সাদা রিফলেক্টর দিয়ে “প্রতিফলিত ডিফিউজ আলোর উৎস” হিসাবেও কাজে লাগানো যায়।
বাজেট সমস্যা থাকলে, সিম্পলি সাদা বড় হার্ডবোর্ডের উপরে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল লাগিয়ে সিলভার রিফলেক্টর বানিয়ে নেয়া যায়। এটি দিব্যি সুন্দর কাজ করবে।
৯. ফোকাসিং
f/2.8 বা তার চেয়েও বড় অ্যাপারচার ব্যবহারে ডেপথ অব ফিল্ড (depth of field) অনেক কমে যায়। এ সময় একেবারে সঠিক জায়গায় ফোকাস করতে হবে। তা না হলে দেখা যাবে, পোট্রেট ছবিটির মুখমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ “আউট অব ফোকাস” (out of focus) বা ব্লার হয়ে যাবে। সাবজেক্টের নাক শার্প এসেছে; কিন্তু, চোখ ঝাপসা এসেছে, যেখানে এই চোখই ছবির পয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হওয়ার কথা ছিল।পুরো ফ্রেম জুড়ে মডেলের মুখমণ্ডল রাখা হলে; চোখে ফোকাস করুন; কিন্তু, বড় ফ্রেম হলে, মডেলের কপালে ফোকাস করুন। আর, নির্ভুলভাবে ফোকাস করার জন্য, নির্দিষ্ট একটি ফোকাস পয়েন্টকে হাতে ধরে চোখে বা মুখমণ্ডলের যে স্থানে ফোকাস করতে চান, সেখানে স্থির করুন।
সেন্ট্রাল AF পয়েন্ট ব্যবহার করা একটি ভাল টেকনিক – ফোকাস পয়েন্ট মুখমণ্ডলে ফোকাস করে সাটার বাটন হাফ-প্রেস করে ফোকাস লক করুন; এবার ফ্রেম রিকম্পোজ করে সাবজেক্টকে ফ্রেমের যে কোন এক দিকে রেখে শট নিন। সিঙ্গেল AF পয়েন্টের পরিবর্তে সেন্টার AF পয়েন্ট ব্যবহার করে ফোকাস করে দ্রুত কাজ করা যায়।
বিকল্প উপায় হল, সিঙ্গেল ফোকাস পয়েন্টকে ফ্রেমের যে কোন এক কর্নারে রেখে মডেলের যে কোন এক চোখে ফোকাস করে শট নিন।
দু’টোর যে কোন একটি পদ্ধতির অনুসরণে আপনি সাবজেক্টকে এক দিকে রেখে একটা ব্যালান্স ও স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশন পদ্ধতিতে শট নিতে পারবেন।
১০. পোট্রেটের পোজ
পোট্রেট ফটোগ্রাফিতে আপনার সাবজেক্ট কি ভাবে পোজ দিবে এবং তার মুখের এক্সপ্রেশন – এ দু’টোর উপরে আপনার ছবির আবেদন (appeal) বহুলাংশে নির্ভর করে। সাবজেক্টের মুখমণ্ডলের এক্সপ্রেশনের সুক্ষ্ম পরিবর্তন – সেটা হাসি হোক আর নাই হোক – আপনার ছবির পুরো ফ্রেমের আবহকে আমূল পরিবর্তন করে দিবে।এজন্য শুটিং চলাকালে মুখমণ্ডলের একেক এক্সপ্রেশনের অনেকগুলো শট নিবেন। পরবর্তীতে পিসিতে ছবিগুলো ডাউনলোড করার পর শটগুলো থেকে একটি বেস্ট শট পছন্দ করে নিতে পারেন।
এছাড়াও, শুটিং এর সময়ে মডেলকে ফ্রেমের বাইরে (off-camera) দৃষ্টি দেওয়া অবস্থায়, উপরে বা নীচে তাকানো অবস্থায় – প্রতি ভঙ্গিমার একাধিক শট নিবেন। প্রতিটি পর্যায়ের শুরুতে একটি বা দু’টি করে টেস্ট শট নিয়ে দেখে নিতে পারেন যে কোনটা ভাল লাগছে।
১১. সূর্যালোকিত দিনে ফিল ফ্ল্যাশের (fill flash) ব্যবহার
যদিও সূর্যের আলোকে ফ্ল্যাশের ব্যবহার অদ্ভূত বলে মনে হতে পারে, তবুও বলি, এই সময়ে ফিল ফ্ল্যাশ ব্যবহারে ভাল রেজাল্ট পাওয়া যায়।পোট্রেট ফটোগ্রাফিতে সূর্যের আলো বিশেষ ঝামেলা সৃষ্টি করে, মুখে বেশ কালো ছায়া (shadow) পড়ে, এক্সপোজারও উল্টাপাল্টা আচরণ করে, কোন কোন অংশে অতিরিক্ত এক্সপোজার পড়ে একেবারে সাদা (burnt-out) হয়ে যায়।
এই রকম পরিস্থিতিতে ‘ফিল ফ্ল্যাশ’ এর ব্যবহার আপনার ছবিতে ইন্সট্যান্টলি ভাল রেজাল্ট এনে দিবে; আরও বেশি ভারসাম্যপূর্ণ ও সঠিক এক্সপোজারে ছবির পিক্সেলগুলো ক্যামেরা সেন্সরে এসে ধরা পড়বে।
কারণ হলো, এ রূপ পরিস্থিতিতে ক্যামেরা সাবজেক্টের মুখমণ্ডল থেকে এক্সপোজার না নিয়ে, সূর্যের আলোজ্জ্বল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এক্সপোজার হিসাব করবে; সাবজেক্টের মুখমণ্ডলকে ডার্ক করে ফেলবে। ফিল ফ্ল্যাশ ব্যবহার করলে, ফ্ল্যাশ থেকে যে ক্যালকুলেটিভ সঠিক মাত্রার আলো সাবজেক্টের উপর পড়বে, তা ফ্রেমে সাবজেক্টের সঠিক মাত্রার এক্সপোজার এনে দিবে।
১২. ডেডিকেটেড ফ্ল্যাশগান সাথে রাখুন
ক্যামেরা বডির বিল্ট-ইন ফ্ল্যাশের চাইতে একটি ডেডিকেটেড ফ্ল্যাশগানের (speedlight, or speedlite) আলো অনেক বেশি শক্তিশালী আলো প্রদান করে। এই ফ্ল্যাশের শক্তিশালী আলোর ঝলক দিয়ে ছোট অ্যাপারচার ব্যবহার করে ছবিতে অনেক বেশি ডেপথ-অব-ফিল্ড আনা যায়; গ্রুপ ছবিতে রেঞ্জের মধ্যে সবগুলো সাবজেক্টের ছবি আলোকিত করা যায়।ডেডিকেটেড ফ্ল্যাশগানের নিজস্ব অনেক সেটিং রয়েছে। একে বিভিন্ন নির্দিষ্ট অ্যাঙ্গেলে বা পাশে ঘুরিয়ে আলোকে ছাদ বা দেয়াল থেকে বাউন্স করানো যায়।
১৩. ফ্ল্যাশগানকে রিমোট দিয়ে ফায়ার করা
ফ্ল্যাশগানকে ক্যামেরা বডির সাথে না লাগিয়ে ক্যাবলের সাথে লাগিয়ে, বা ক্যামেরার হট-সু (hotshoe) এর সাথে লাগানো রিমোট কমান্ডার ব্যবহার করে ওয়্যারলেস সিস্টেমের মাধ্যমে ফ্ল্যাশকে ফায়ার করা, কিংবা, অনেক ক্যামেরায় এমনও সিস্টেম আছে যা দিয়ে ক্যামেরার সাথে কম্প্যাটিবল ফ্ল্যাশগানকে ক্যামেরার বিল্ট-ইন ফ্ল্যাশের আলো দিয়ে ফায়ার করানো যায়।আর এভাবে সাবজেক্ট থেকে একটু দূরে স্থাপন করা ফ্ল্যাশগানকে ফায়ার করে আপনার ছবিকে একেবারে অন্যরকমভাবে ক্যাপচার করা যায়। ফ্ল্যাশগানকে কতটা ক্রিয়েটিভ উপায়ে ব্যবহার করা হবে, সেটা সম্পূর্ণভাবে ফটোগ্রাফারের ক্রিয়েটিভিটির উপরে নির্ভর করে। ফ্ল্যাশগানের আলোর সঠিক ব্যবহারে আপনার তোলা ছবিতে নিয়ে আসবে প্রোফেশনাল সিগনেচার।
দু’টো ফ্ল্যাশ ব্যবহার করা যায় না? হ্যা, অবশ্যই যায়। দু’টো ফ্ল্যাশগান ব্যবহার করে ছবিতে কমপ্লেক্স লাইটিং ইফেক্ট তৈরী করা যায়। এই পরিস্থিতিতে, রিমোট ট্রিগার ব্যবহার করে একটি ফ্ল্যাশকে “Master” মুডে ব্যবহার করা হয়; প্রথম ফ্ল্যাশ ফায়ার করার পর, দ্বিতীয় ফ্ল্যাশ, যেটি “Slave” মুডে থাকে, সেটি একই সময়ে যুগপৎভাবে ফায়ার হয়।
১৪. ফ্ল্যাশ লাইটিং ব্যবহারে আর্টিস্টিক শট নিন
ফ্ল্যাশগান, রিমোট ট্রিগার এবং সঠিক মাপের ডিফিউজারের সঠিক এবং চাতুর্যপূর্ণ ব্যবহার আপনার ফটোগ্রাফিতে খুলে দিবে দারুন লাইটিং সেট-আপের এক বিশাল জগৎ।সাবজেক্টের পাশ থেকে আলো ফেলে আপনার পোট্রেটে নিয়ে আসতে পারেন ড্রামা; অথবা সাবজেক্টের পিছনে থাকা আকাশ বা ব্যাকগ্রাউন্ডকে আন্ডার-এক্সপোজ করে ছবিকে করে তুলতে পারেন আরও ক্রিয়েটিভ; আবার, এক্সপোজার কম্পেনসেশনের ডায়ালকে ঘুরিয়ে -2 তে কমিয়ে এনে সাবজেক্টের ব্যাকড্রপকে মুডি করে ধারণ করতে পারেন।
0 Comments