CPL ফিল্টার আকাশের রঙকে বাড়িয়ে দেয়
সিটিস্কেপের ছবি তুলতে একটা বিষয়ে বেশ ঝামেলা হয়, আকাশের রঙ চোখে যেটা দেখি, ক্যামেরায় ছবি তুলবার পর সেই কালার সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। ঠিক বলছি? ফ্রেমের অন্যান্য অংশের রঙগুলো ঠিক মতো আনতে পারলেও, আকাশের রঙ ম্যাড়ম্যাড়ে বা ঝাপসা, কেমন জানি, আসে।এ ক্ষেত্রে সার্কুলার পোলারাইজিং ফিল্টার ব্যবহার করে আপনি আকাশের রঙকে বাড়িয়ে নিতে পারবেন, ফ্রেমের অন্য অংশেরও ভাল রঙ পেতে পারেন। সিপিএল ফিল্টারকে সঠিক অ্যাংগেলে ঘুরিয়ে নিলে এ ভাবে ছবি তুলা সম্ভব, কারণ, CPL কে সঠিক অ্যাংগেলে ঘুরানোর মাধ্যমে সূর্যের আলোর পোলারাইজেশন ইফেক্ট কমিয়ে (বা, দূর করে) আকাশের ঝাপসাভাব দূর করা সম্ভব।
উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছি, গম্বুজটা অফ-হোয়াইট হয়ে গেছে, আর আকাশের রঙটাও কেমন জানি বেশী উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। এবার, আমি আমার Manfrotto CPL ফিল্টারটা লেন্সের সাথে জুড়ে দিয়ে আরেকটা শট নিলাম। এবার গম্বুজটার আসল কালার পেলাম, সেই সাথে আকাশের রঙে কন্ট্রাস্ট আসাতে গাঢ় রঙ ধারণ করল; আর, ছবিতে মেঘেদের উপস্থিতিও ছবিতে ন্যাচারাল একটা ইলিমেন্টের উপস্থিতি যুক্ত ছবিকে প্রাণবন্ত করে তুলল।
উপরের চিত্রে CPL ফিল্টার ব্যবহারের আরও একটা তুলনামুলক চিত্র দেখানো হল, বামে সিপিএল ছাড়া এবং ডানে সিপিএল ব্যবহার করে তোলা হয়েছে।
সিপিএল ফিল্টার রিফলেকশন দূর করে
কাঁচ দিয়ে ঘেরা হাইরাইজ বিল্ডিং বা পানি আছে এমন স্থানে ল্যান্ডস্কেপের ছবি তুলতে গেলে সূর্যের আলো থেকে সৃষ্ট রিফ্লেকশনের কারণ ছবি তোলা অসম্ভব হয়ে পড়ে। রিফ্লেকশন এড়াতে অনেক সময় ভাল কম্পোজিশনের ফ্রেম ছেড়ে দিয়ে অন্য কম্পোজিশনে ছবি তুলতে হয়, বা, আলোর ডিরেকশন পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।এই পরিস্থিতিতে সিপিএল ফিলটার ব্যবহারের সবচেয়ে মোক্ষম সময়। এই ফিল্টার ব্যবহার করে ছবি থেকে পানিতে পড়া প্রতিবিম্ব দূর করা সম্ভব। সিপিএল ফিল্টারটি লেন্সে লাগিয়ে নিয়ে সঠিক অ্যাঙ্গেলে ঘুরিয়ে রিফ্লেকশন দূর করে নিন।
পাশাপাশি রাখা উপরের দু’টি ছবি দেখে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে, CPL ফিল্টার লাগানোর পরে পানিতে পরা বাড়ির প্রতিবিম্বটা প্রায় এড়ানো গেছে। সিপিএলের কার্যকারিতা এখানে ম্যাজিকের মত কাজ করেছে।
কিভাবে পোলারাইজিং এফেক্টের ম্যাক্সিমাম ব্যবহার করা যায়?
বিজ্ঞান বলে, সূর্যের আলোর ৯০ ডিগ্রী কোণে পোলারাইজেশন ইফেক্ট সবচেয়ে বেশী হয়। আর, পোলারাইজেশন ইফেক্টটা সার্কুলার ব্যান্ড আকারে কাজ করে।তার মানে হল, সূর্য যদি আমার মাথার উপরে থাকে, তা হলে ভূমির সমান্তরালে ৯০ ডিগ্রী তাকিয়ে আমি যদি আকাশের ছবি তুলি, তবে সমভাবে আলোকিত (equally lit) আকাশের ছবি পাব।
সিপিএল ফিল্টারের ম্যাক্সিমাম ব্যবহার করে আপনার কাংখিত ফ্রেমের জন্য ক্যামেরা কোন দিকে তাক করে ধরতে হবে, তা বের করা একদম সহজ।
আপনার বুড়ো আঙ্গুলকে সূর্যের দিকে ধরে ইনডেক্স ফিঙ্গারটি বুড়ো আঙ্গুলের সাপেক্ষে ৯০ ডিগ্রী কোণ তৈরী করুন; এতে আঙ্গুলের একটা L শেপ তৈরী হবে। ইনডেক্স ফিঙ্গার যে দিকে থাকবে, সেটাই হল আপনার আদর্শ অ্যাঙ্গেল, যেদিকে আপনি আপনার ফ্রেমে সিপিএল ফিল্টার দিয়ে আদর্শ এক্সপোজার পেতে পারেন। সিম্পল সূত্র, তাই না!
অন্যথায়, আপনার ছবিতে আকাশের রঙ সঠিকভাবে আসবে না। আর ছবিতে এই অসুবিধা পোস্ট প্রসেসিং দিয়ে ঠিক করতে পারবেন না।
সিপিএল ফিল্টার ব্যবহারের সময় কি কি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে
১. সিপিএল ফিল্টার 1-2 স্টপ আলো আটকে দেয়
সিপিএল ফিল্টার ক্যামেরার লেন্সে লাগানো হলে, এটার ভিতর দিয়ে যে আলো পাস করে তা থেকে ১ থেকে স্টপ পরিমান আলোকে আটকিয়ে দেয়, অর্থাৎ কম আলো প্রবেশ করে।এর মানে হল, কোন একটি ফ্রেমে আপনার সেটিং যদি 1/1000s, f/16 ও ISO 100 হয়, তবে, সিপিএল ফিল্টার লাগানো হলে, আপনার এক্সপোজার রিডিং ২ স্টপ কমে যাবে। সুতরাং, আপনি যদি ২-স্টপ বেশি আলো পেতে চান, তবে আপনাকে নীচের যে কোন একটি অ্যাডজাস্ট করে নিতে হবে:
- সাটার স্পীডকে 1/1000s থেকে 1/250s এ নামিয়ে আনতে হবে,
- অ্যাপারচারকে f/16 থেকে f/8 এ খুলে দিতে হবে,
- ISO রিডিংকে 100 থেকে বাড়িয়ে 400 করতে হবে।
২. ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল লেন্স ব্যবহার এড়াতে হবে
ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল লেন্সের সাথে সিপিএল ফিল্টার ব্যবহার করলে অনেক সময় ছবিতে আকাশের রঙ ও ফ্রেমের অন্যান্য অংশের রঙে ভ্যারিয়েশন ঠিক মত পাওয়া যায় না। এর জন্য সিপিএল ফিল্টারকে এককভাবে দায়ী করা যায় না। আগেই আলোচনা করা হয়েছে, টেকনিক্যালি সূর্যের আলোর ৯০ ডিগ্রী কোণে পোলারাইজেশন ইফেক্ট সর্বোচ্চ হয়।ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল লেন্স ব্যবহার করলে, ছবির বিশাল এলাকা জুড়ে আকাশের বিস্তৃতি চলে আসে; আর এতেই রঙের ভ্যারিয়েশনটা ঘটে যায়।
সিপিএল ফিল্টারের সর্বোচ্চ কার্যকারিতা পেতে, সবচেয়ে ভাল হয় ২৪এমএম (24mm) এর বেশি ওয়াইড লেন্স ব্যবহার না করা।
৩. সব সময় ম্যাক্সিমাম ডিগ্রির পোলারাইজেশন ব্যবহার না করাই ভাল
ফটোগ্রাফারদের সহজাত প্রবৃত্তি হল, ছবি তোলার সময় যখন যে জিনিষ ব্যবহার করেন, তখন তার ম্যাক্সিমাম ভ্যালু ও ডিগ্রিতে ব্যবহার করেন। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, আমাদের যদি f/1.8 বা f/1.4 লেন্স থাকে, তাইলে আর রক্ষা নাই, দেখা যায়, সবই তখন f/1.8 বা f/1.4 অ্যাপারচার দিয়ে তুলে যাচ্ছি!এ ক্ষেত্রে পরামর্শ হল, সিপিএল ফিল্টারকে ৩৬০ ডিগ্রী কোণে ঘুরিয়ে নিবেন, এবার আপনার ফ্রেমের ছবির একটা শট নিয়ে দেখুন, ছবিতে কনট্রাস্ট, স্যাচুরেশন এবং রিফ্লেকশন কমেছে, না কি, বাড়ছে।
এভাবে দু’একবার শট নিয়ে ছবি দেখে নিয়ে ফিল্টারকে যে অ্যাঙ্গেলে রেখে আপনার কাঙ্খিত এক্সপোচার পাচ্ছেন, সে সেটিং এ ছবি তোলা সম্পন্ন করুন।
অনেক সময় ম্যাক্সিমাম ডিগ্রিতে সিপিএল ফিল্টার ব্যবহার করলে ছবিতে রঙে অনেক ভ্যারিয়েশন দেখা যায়, যা কাঙ্খিত নাও হতে পারে, বিশেষ করে যখন ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল লেন্সের সাথে এটা ব্যবহার করা হয়।
0 Comments