ফটোগ্রাফির অ আ

যত ধরণের ফটোগ্রাফি আছে তার মধ্যে ফুলের ফটোগ্রাফি সবচেয়ে বেশি আনন্দদায়ক এবং শান্তিদায়ক। একটা ফুল দেখলাম আর খুট করে ক্লিক করে ছবি তুলে ফেললাম – ব্যাপারটা অত সহজ নয়। একটা বাণিজিকভাবে সফল ও ভাল ছবি তুলতে এমনকি ঝানু ফটোগ্রাফারকেও গলদঘর্ম হতে হয়। মোদ্দা কথা হল, ফুলের একটা ভাল ছবি তুলতে হলে ভাল সেটিং, লাইটিং এবং গিয়ারের পাশাপাশি ভাল প্ল্যানিং এবং এ্যাপ্রোচও প্রয়োজন হয় – নজর রাখতে হয় ব্যাকগ্রাউন্ডের দিকে।
এই আর্টিকেলে পাঠকদের জন্য আলোচনা করা হবে, একটা ভাল ফুলের ছবি তুলতে কি কি বিষয়ের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হয়।
ফুলের ফটোগ্রাফি নিয়ে আলোচনা শুরু করার প্রথমে আমরা আলোচনা করব গিয়ার বা ক্যামেরা ও এর সেটিং নিয়ে।
এর পরে যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, “আদর্শ লাইটিং” – আসলে ন্যাচারাল লাইটিংয়ে ফুলের ছবি সবচেয়ে আবেদনময় হয়।
পরবর্তী পর্যায়ে “কম্পোজিশন” নিয়ে আলোচনা করা হবে। এই পর্যায়ে, আমরা জানব, একটা ফুলের স্ট্রং ছবির জন্য কোন ধরণের কম্পোজিশন সবচেয়ে ভাল কাজ করে।
সূচীপত্র

গিয়ার (Gear)

ফুলের ফটোগ্রাফির জন্য খুব বেশি চিন্তা করার কিছু নাই, আমাদের লাগবে – ক্যামেরা, লেন্স এবং অ্যাক্সেসরিজ – এই যেমন, ফ্ল্যাশ এবং ট্রাইপড।

Guide flower photography how to beginners

১) ক্যামেরা (Camera)

ফুলের ফটোগ্রাফির জন্য ডিএসএলআর (DSLR) ক্যামেরার প্রয়োজন হবে। এছাড়া অন্য কিছু এখানে রিকমেন্ড করছি না। ডিএসএলআর ক্যামেরা ব্যবহারের অনেক সুবিধা আছে; এই গিয়ারে বিভিন্ন ধরনের সেটিং ব্যবহার করা যায় এবং এতে অনেক ধরণের লেন্স ব্যবহার করা যায়।
কোন ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করা উচিত? যারা বিগিনার ফটোগ্রাফার, তারা হাতের কাছে যেটা আছে সেটা নিয়ে শুরু করুন। এন্ট্রি-লেভেল বা প্রোফেশানাল-লেভেল, যে ধরণের ডিএসএলআর-ই হোক না কেন, সব ডিএসএলআর ক্যামেরার রয়েছে অবিশ্বাস্য ভাল ছবি দেয়ার ক্ষমতা।
মিররলেস ক্যামেরাও এক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু, মিররলেস ক্যামেরার লেন্সের সংখ্যা অপ্রতুল এবং এর দামও বেশি হওয়াতে এটা ভাল অপশন না।
সুতরাং, ডিএসএলআর-ই এ ক্ষেত্রে বেস্ট অপশন।

guide flower photography how to beginners
ডিএসএলআর এবং ম্যাক্রো লেন্স দিয়ে তোলা ফুলের ছবি

২) লেন্স (Lenses)

প্রথমেই একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, যে কোন লেন্স দিয়েই ভাল ছবি তোলা সম্ভব – ম্যাক্রো, নন-ম্যাক্রো, ওয়াইড, বা, টেলিফটো।

guide flower photography how to beginners
৫০এম.এম. এফ/১.৮ প্রাইম লেন্স দিয়ে তোলা ফুলের ছবি
ফুলের ছবি তোলার জন্য 50mm f/1.8 লেন্স বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। কারণ, ক্রপ বডিতে এর ফোকাল লেন্থ ও ওয়াইড এ্যাপারচার দিয়ে ক্রিয়েটিভ ছবি তোলা যায় এবং এই লেন্সের দামও তুলনামূলকভাবে কম।
অপর দিকে, লেন্সের জুম বা ম্যাগনিফিকেশন যত বেশী হবে, ভাল ছবি পাওয়ার ক্ষেত্রে তত বেশী সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। আপনি এতে ফুলের আরও কাছে যেতে পারবেন ও ফুলের খুঁটিনাটি অনেক ডিটেইলড ইমেজ তুলে আনতে পারবেন।

guide flower photography how to beginners
ছবিটিতে ডেডিকেটেড ম্যাক্রো লেন্স ব্যবহার করা হয়েছে
ক্লোজ-আপ ফটোগ্রাফির জন্য ম্যাক্রো-লেন্সের আলাদা কারিশমা আছে, আমি ব্যক্তিগতভাবে ম্যাক্রো-লেন্স ব্যবহারের জন্য বলে থাকি। মোলায়েম বোকেহ (creamy bokeh), অত্যন্ত কাছে থেকে ছোট সাবজেক্টের পিন-শার্প, লাইফ-সাইজ (life-size) ফটোগ্রাফির জন্য এই লেন্সের ক্যাপাবিলিটি অবিশ্বাস্য।
লাইফ-সাইজের একটা অর্থ হতে পারে এ রকম যে, পূর্ণ বয়স্ক মানবদেহের আকারের তুলনায় একটি ফুলের (flower) ছবি ছোট দেখায়। কিন্তু, একটা গোলাপ ফুলের সাপেক্ষে আরেকটা গোলাপ ফুলকে যেমন দেখাবে, সেটাই হল লাইফ-সাইজ।
ফুলের ছবি তুলতে গিয়ে জুম লেন্সের সাথে এক্সটেনশন টিউব (extension tube) ব্যবহার করা আরেকটা অপশন হতে পারে। এই টিউবের সাহায্যে লেন্সের মিনিমাম ফোকাস দূরত্ব (minimum focus distance) কমানো যায়, যা সাবজেক্টের ম্যাগনিফিকেশন বাড়িয়ে দেয়। তবে, টিউব ব্যবহারের ফলে পুরো সেটআপের নড়াচড়ার গণ্ডি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

guide flower photography how to beginners
“ফি লেন্সিং” পদ্ধতিতে তোলা ফুলের ছবি
এক্সটেনশন টিউবকে ক্যামেরা ও লেন্সের মাঝে সেট করা হলে তা ফোকাস দূরত্বকে কমিয়ে দিলেও একটা অসুবিধা থেকেই যাবে, তা হলো, চট করে ফোকাস পয়েন্ট পরিবর্তন করা যায় না। তার মানে হল, এক্সটেনশন টিউব লাগালে দূরের সাবজেক্টের ছবি তুলতে পারবেন না; শুধুমাত্র কাছাকাছি কয়েক ফিটের মধ্যে থাকা সাবজেক্টের ছবি তুলতে পারবেন।
ফুলের ফটোগ্রাফির তৃতীয় আরেকটি উপায় হচ্ছে “ফ্রি লেন্স” পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বডি থেকে লেন্স খুলে নিয়ে যেখানে লেন্স মাউন্ট করতে হয় সেখানে হাত দিয়ে ধরে থেকে লেন্স আগে-পিছে করে সাবজেক্টের ছবির কাঙ্খিতভাবে ম্যাগনিফিকেশন সেট করা।
এভাবে ছবি তুললে ইন্টারেস্টিং ইফেক্টের ছবি পেতে পারেন। তবে, এভাবে ছবি তোলার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে ক্যামেরার বডির মধ্যে ধূলাবালি ঢুকে না পড়ে। ব্যাকআপ বডি ব্যবহার করাই ভাল।

৩) কৃত্রিম লাইটিং (Artificial lighting)

যারা ফুলের ফটোগ্রাফি করেন, তারা অনেক সময় সাবজেক্টের উপরে এক্সটারনাল সোর্স যেমন: ফ্ল্যাশ বা রিংলাইট, ইত্যাদি, থেকে আলো ফেলে ছবি তুলে থাকেন। এগুলো অনেকসময় ভারী ও উচ্চ মূল্যের হয়ে থাকে। ফুলের ফটোগ্রাফির জন্য ন্যাচারাল লাইটই ভাল; কিন্তু, আলো কম থাকলে ফ্ল্যাশ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে।

৪) ট্রাইপড (Tripod)

ফুলের ফটোগ্রাফিতে ট্রাইপডের ভূমিকা অনেক। তবে, ট্রাইপডে ক্যামেরা সেট করলে মুভমেন্ট সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। অনেকে এক্ষেত্রে ট্রাইপড ব্যবহার করতে চান না। ক্যামেরা হাতে নিয়ে ফুলের ছবি তুলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি আমি। তবে, ক্ষেত্রবিশেষে ট্রাইপড ব্যবহার না করলেই নয়। এ ব্যাপারে পরে আলোচনা করা হবে।

guide flower photography how to beginners
ছবিটি তুলবার সময় ট্রাইপড ব্যবহার করা হয়েছে

ক্যামেরা সেটিংস (Camera Settings)

ফ্লাওয়ার ফটোগ্রাফিতে সাধারণত: দুইভাবে ছবি তোলার চল রয়েছে: পুরো ফ্রেমকে শার্প ফোকাসে রাখা হয়; অথবা, ফ্রেমের একটি অংশকে শার্প রেখে বাদবাকি অংশ শ্যালো ফোকাস (Shallow focus) রাখা হয়।

guide flower photography how to beginners
ফ্রেমের পুরো অংশে জুড়ে শার্প ছবি
বেশি ম্যাগনিফিকেশনে (ফোকাল লেন্থে) সাবজেক্টের শার্প ছবি পেতে অ্যাপারচার ছোট করে আনতে হয়, যেমন f/16 বা প্রয়োজনে তার চেয়েও ছোট। এই ক্ষেত্রে ট্রাইপড ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে; কারণ, আর কিছুই না; অ্যাপারচার ছোট হওয়াতে সাটার স্পীড এমন কমে যাবে যে, হাতের কম্পনে ছবি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে।
আবার অ্যাপারচার বেশি ছোট করার কারণে লেন্সের ডিফ্র্যাকশন (diffraction) এর কারণে ছবির বিকৃতি ঠেকাতে ছবির ফোকাস স্ট্যাকিং (focus stacking) পদ্ধতি ছবি তুলে পরে পোস্ট প্রসেসিং এর মাধ্যমে ছবির শার্পনেস বাড়িয়ে নেয়া যায়।

guide flower photography how to beginners
ডেইজি ফুলের একটি অংশ শার্প রাখা হয়েছে; ফ্রেমের বাকি অংশ ব্লারের বোকেহ করা হয়েছে
এতসব বিবেচনা করে দেখা গেছে যে, শ্যালো ফোকাসে (অর্থাৎ, অ্যাপারচার ম্যাক্সিমাম খুলে দিয়ে) ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি করতে অনেকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এতে কোন এক্সট্রা ইকুইপমেন্ট – ফ্ল্যাশ, বা ট্রাইপড – কিছুই লাগে না। ওয়াইড অ্যাপারচার, যেমন, f/2.8 থেকে f/7.1 রেঞ্জে রেখে ফ্রেমে ফুলের একটি ছোট অংশকে ফোকাসে রেখে ছবি তুললেই হবে। ফুলের ফোকাসে থাকা অংশ বাদে ফ্রেমের বাকি অংশ আউট-অব-ফোকাস হয়ে ছবিতে অনন্য এবং ব্যতিক্রমী দৃষ্টিনন্দন ইফেক্ট নিয়ে আসে।
ফুলের ছবি তোলার এই দুই স্টাইলের ক্ষেত্রে “অ্যাপারচার” একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। মন মতো অ্যাপারচার সেট করে সেই অনুযায়ী সাটার স্পীড এবং আই.এস.ও. অ্যাডজাস্ট করে নিতে হবে।
ভুলে গেলে চলবে না, সাটার স্পীড 1/160 রাখা চাই, নতুবা হাতের সামান্য কম্পনে ছবি ব্লার হয়ে যেতে পারে।
ক্যামেরাতে বিল্ট-ইন ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন সিস্টেম থাকলে সেক্ষেত্রে সাটার স্পীড আরও ১ স্টপ কমানো যেতে পারে।

লাইটিং (Lighting)

এবার ফুলের ফটোগ্রাফিতে ন্যাচারাল আলোর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করব। কৃত্রিম আলো একেবারেই যে কাজে লাগে না, তা নয়। তবে, দিনের আলোর যতটুকুই থাকুক না কেন, ন্যাচারাল আলোতে ফুলের ছবি তুলতে বিদ্যমান আলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার করার সময় অনেক ভালো ও ক্রিয়েটিভ শট পাওয়া যেতে পারে।
লাইটিং নিয়ে আমার প্রথম সাজেশন হল, মেঘাচ্ছন্ন (overcast) দিনে ফুলের ছবি তুলুন। এই দিনে ডিফিউজড (diffused) আলোর (বা মনোরম আলো) কারণে আলো ফুলের উপরে সমসত্ত্বভাবে (evenly) পড়ে। আর, ডিফিউজড আলোতে ফুলের পাপড়ির রঙ ভালোভাবে ফুটে উঠে।

guide flower photography how to beginners
মেঘাচ্ছন্ন দিনে টিউলিপের পাতার ছবি তোলা হয়েছে। রঙ বেশ গাঢ় দেখাচ্ছে।
লাইটিং নিয়ে আমার দ্বিতীয় সাজেশন হল, সকালে বা বিকালের সূর্যের সোনালী (golden) আলোতে ছবি তুলুন। এই সময় ফুলের উপরে রোদের কড়া আলো পড়ে না এবং আলোতে বর্ণিলভাব থাকতে ফুলের অসাধারণ ইমেজ পেতে পারেন।

guide flower photography how to beginners
বিকালের স্নিগ্ধ, গোল্ডেন আওয়ারে তোলা ছবি
শুটিং স্পটের ছায়াঘেরা (shade) এলাকা ব্যবহার করে ফুলের ক্রিয়েটিভ শট নেয়া যেতে পারে। ছবি তুলবার সময় শেডে দাঁড়াতে হবে যাতে সূর্য আমার পিছন দিকে থাকে; এতে ফুল আমার সামনে থাকে এবং সূর্যের আলোতে ঠিকরে এসে ফুলের পিছন দিক থেকে পড়ে; কিন্তু, আলো সরাসরি ফুলের উপরে পড়ে না।
এই রকম আদর্শ সুটিং স্টাইলের জন্য গাছের ছায়াতে থাকা ফুলের গাছ খুঁজে বের করতে হবে।
বিকল্প পন্থা হিসাবে, নিজের হাত, মাথা বা ক্যামেরা ব্যাগ দিয়ে আলোর প্রবেশে বাঁধা দিয়ে ফুলের উপরে কৃত্রিম শেডের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

guide flower photography how to beginners
ছবিটা তুলবার সময় আঙ্গুরের ফুলের উপরে সূর্যের রশ্মি থেকে আড়াল করতে কৃত্রিমভাবে ছায়া তৈরী করা হয়েছিল

কম্পোজিশন (Composition)

ফুলের ফটোগ্রাফিতে সর্বশেষ বিবেচ্য বিষয় হলো ফ্রেমের কম্পোজিশন। বিগিনারদের কাছে এটা পীড়াদায়ক ব্যাপার মনে হতে পারে। কিন্তু, অল্প কিছু কম্পোজিশনের গাইডলাইন মনে রেখে ছবি তুললে আপনার ছবি তোলার ধরন ভাল হতে আরম্ভ করবে।

guide flower photography how to beginners

পুরো ফ্রেম জুড়ে সাবজেক্টের ছবি রাখুন

ফুলের ছবি তুলবার সময় খেয়াল রাখবেন যাতে ফ্রেমের বড় অংশ জুড়ে খালি জায়গা না থাকে। খুব বেশি খালি জায়গা থাকলে আপনার সাবজেক্ট থেকে দর্শক বা জাজদের মনোযোগকে অন্য দিকে নিয়ে যাবে, বা, ছবির মূল সাবজেক্ট সম্পর্কে কনফিউশন তৈরী করবে; এতে আপনার সাবজেক্ট (ফুল) দর্শকদের মনে জোড়ালো কোন প্রভাব (impact) ফেলতে ব্যর্থ হবে।
ফ্রেমে খুব বেশি ফাঁকা স্থান না রেখে যতটা সম্ভব জুম (অন্য ভাবে বললে, ফোকাল লেন্থ বা mm বাড়াতে হবে) করে ফুলকে দিয়ে ফ্রেম পূর্ণ করার চেষ্টা করুন।

guide flower photography how to beginners

যত রঙ, তত ভাল

ফুলের ছবি তোলার সময় এমন শট পাওয়া যেতে পারে যেখানে আপনার সামনে যে ফুল রয়েছে তাতে বিভিন্ন রঙ এর সমারোহ আছে। এটাই অ্যাডভানটেজ হিসাবে আপনার ছবিতে ব্যবহার করুন।
আপনার টার্গেট করা সাবজেক্ট ফুলকে সামনে রেখে পিছনে আরও কিছু ফুলের গাছকে ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্লার করে রাখুন। এবার ফ্রেমের শট নিন। এই ফ্রেমের মূল সাবজেক্টের সামনে আরও ১/২টা ফুলকে সামনে রেখে ফোরগ্রাউন্ড ব্লার করে শট নিন। এতে ফ্রেমটা আরও ক্রিয়েটিভ ও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠবে।

guide flower photography how to beginners

ফ্রেম ক্লিন রাখুন

শুধু ফুলের ফটোগ্রাফিই নয় অন্য যে কোন ছবি তোলার সময় আপনার ফ্রেমের মধ্যে একটি ফোকাল পয়েন্ট রাখতে হবে; এমন কিছু যা দেখে ছবির মূল বিষয়বস্তু আন্দাজ করে নেয়া যায়। এটা ফুলের পাপড়ি হতে পারে; ফুলটাও স্বয়ং ছবির মূখ্য বিষয় হতে পারে; হতে পারে ফুল ও তার চারিদিকের আবহ।
অর্থাৎ, আপনার ফ্রেমের যাই-ই থাকুন না কেন, ছবিতে চোখ পড়তেই অডিয়েন্সের চোখ যেন আপনার ছবির ফোকাল পয়েন্টের দিকে চলে যায়।
ছবিতে ফোকাস পয়েন্ট জোড়ালো (strong) করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল, ছবির মূল সাবজেক্টকে ফ্রেমের বিশাল অংশ জুড়ে রাখা যাতে চট করে চোখে পড়ে; বাকি অংশ ব্লার করা বা অপেক্ষাকৃত অগুরুত্বপূর্ণ বিষয় দিয়ে পূর্ণ করা। ব্যাপারটি আসলে বেশ সহজ, তাই না?
তাহলে ফুলের পরবর্তী ফটোগ্রাফ নেয়ার সময়, সাবজেক্টের আশেপাশে ডিস্ট্র্যাকটিং যা কিছু আছে তা ফ্রেমের বাইরে রাখতে চেষ্টা করব। প্রয়োজনে ক্যামেরা বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে নিয়ে ভিউফাইন্ডার বা লাইভভিউ এ দেখে ফ্রেম সিলেক্ট করব।
এর মধ্যে রয়েছে, সাবজেক্টের ব্যাকগ্রাউন্ডের out-of-focus অংশে অন্য গাছের ডালপালা, বা সূর্যের আলো পড়া বেশ উজ্জ্বল স্থান, বা বেশী অন্ধকারাচ্ছন্ন স্পট। এই ফ্যাক্টরগুলো সাবজেক্টের সাথে বেখাপ্পা লাগবে ও দর্শকদের মনোযোগ সাবজেক্ট থেকে দূরে সরিয়ে দিবে; হতে পারে দর্শক হয়তো বিরক্ত হয়ে অন্য কোন ছবির দিকে চলে যেতে পারেন।
ফ্রেমকে সিম্পল ও চোখের জন্য প্রশান্তিময় রাখতে হবে।

guide flower photography how to beginners
ছবির ফ্রেমে তাকালে কোথায় চোখ যায়? একেবারে সরাসরি ফুলের পরাগদণ্ডের উপরে। তাই না?

পরিশেষে…

এখানে আলোচনা করা ফুলের ফটোগ্রাফির গাইডগুলো অনুসরণ করে আপনার ফটোগ্রাফি ভাল হয়ে উঠতে থাকবে। শুধু পড়লেই হবে না, নিয়মিত নিয়ম মেনে ছবি তুলে অনুশীলন করতে হবে। ছবি তুলবার সময় ক্যামেরার বডি, সেটিং, লাইটিং এবং কম্পোজিশন – এই ফ্যাক্টরগুলো এক সাথে সমন্বয় করে ছবি তুলতে হবে।
আমি নিশ্চিত যে, এভাবে ছবি তুলতে পারলে আপনার পরবর্তী শটটি হবে দেখবার মত একটি শট, যা দেখে আপনি চমৎকৃত হবে; আনন্দদায়ক হবে দর্শকদের জন্য।

Post a Comment

0 Comments