কম্পোজিশনের ভুলের কারণে একটা অসাধারণ ছবির বিশেষত্ব নষ্ট করে দিতে পারে; আবার সঠিক কম্পোজিশনে তোলা একেবারে সাধারণ দৃশ্য ও সিচুয়েশনের ছবিও অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে।
আর এই কথা চিন্তা করে, এই লেখায় ১০ টি ফটো কম্পোজিশন রুল নিয়ে আলোচনার অবতারণা করা হয়েছে, যে রুলগুলো অনুসরণ করলে আপনার নিষ্প্রাণ ছবিগুলো সুন্দর ও অর্থবহ হয়ে
তবে সুখের ব্যাপার হল, ফটোগ্রাফারদের এই সকল রুলগুলোর মুখস্থ করে রাখতে হবে। আবার এমনও নয় যে, প্রতিটা ছবিতেই এই সব রুল অনুসরণ করে তুলতে হবে। বরং, প্রতি রুল আয়ত্ব করার জন্য একটু একটু করে সময় দিন যাতে রুল মেনে ছবি তোলার অভ্যাস ফটোগ্রাফারের রক্তের মধ্যে মিশে যায়। ছবি তুলতে বের হলে প্রতিটা ছবি তুলবার সময় কোন রুল অনুসরণ করতে হবে তা যেন ক্ষণিকের চিন্তাতেই বের করে ফেলা যায়। ব্যাপারটি হবে সাবলীল; কোন ধরণের জড়তা থাকবে না। এই ধরণের অনুশীলনের মাধ্যমে ফটোগ্রাফার যেখানেই যাবেন না কেন, যে কোন সিচুয়েশনে কোন রুলের মাধ্যমে ছবি তুলতে সেটি সর্বোচ্চ মানের হবে, তা ফটোগ্রাফারদের সহজাত প্রবৃত্তিতে পরিণত হবে।
রুল মেনে ছবি তোলা কঠিন কিছু নয়
ছবি তোলার কম্পোজিশন কঠিন ভেবে কঠিন মনে করার কিছু নাই। “রুল অব থার্ড” (Rule of Thirds) নিয়ে অনেক ধরণের থিওরী বলা আছে; তেমনি আরও জটিল কম্পোজিশন রুল “গোল্ডেন মিন” (Golden Mean) নিয়েও অনেক কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, খেয়াল রাখতে হবে, ছবি তুলতে গিয়ে কঠোরভাবে রুল অনুসরণ করে ছবি তুললে আপনার ছবির মধ্যে যে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবের আবহ যেন নষ্ট না হয়ে যায় – এ ব্যাপারটিও লক্ষ্য রাখতে হবে।কিন্তু, বাস্তবে কাজ করতে গেলে অনেক ধরণের দৃশ্য ও সিচুয়েশনের সম্মুখীন হতে হয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে রুলের বাইরে গিয়েও কাজ করতে হবে – খোলা মন নিয়ে কাজ করতে হতে পারে। একটা রুল একটা ছবির জন্য প্রযোজ্য হলেও অন্য ছবির ক্ষেত্রে সেই রুল প্রযোজ্য হবে না, বা, প্রযোজ্য নাও হতে পারে।
ছবি তুলবার সময় কম্পোজিশনের ব্যাপারে যে বিষয়টি মনে রাখা সবচেয়ে জরুরী, তা হল, আপনি যে কম্পোজিশনে ছবি তুলেন না কেন, আপনার সিদ্ধান্ত আপনার ছবির উপরে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে এবং এই ছবিকে মানুষ কি দৃষ্টিতে দেখতে পারে। আপনি ছবি যে ভাবেই তুলেন না কেন, লেন্সের ফোকাল লেন্থ অথবা সাবজেক্টকে ফ্রেমের কোথায় পজিশন করালেন – এই দু’টি ফ্যাক্টর আপনার ছবির পার্থক্য গড়ে দিবে।
ফটোগ্রাফিতে টেকনিক্যাল কিছু সম্পর্কে পূর্ব ধারণা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; আর কম্পোজিশন সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকাও জরুরী। আবার, একটা দারুণ শট নেয়ার জন্য একজন ফটোগ্রাফারের কিছু ভিজ্যুয়াল সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এই লেখাতে একজন ফটোগ্রাফারের ছবি তুলবার সময় যে ১০টি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত সে সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
রুল ১ – দৃশ্যকে সিম্পল রাখুন
খালি চোখে যখন কোন দৃশ্য দেখান, সেই দৃশ্য থেকে আপনার অবচেতন মন আপনার পছন্দের সাবজেক্টকে আগে নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু, ক্যামেরার “ইলেকট্রনিক ব্রেন” সেভাবে চিন্তা করতে পারে না – ক্যামেরার মধ্যে সে ধরণের আবেগী বাছ-বিচার নাই – তার সামনের দৃশ্যে যা কিছু থাকে, সবই সে ধারণ করে থাকে যা ফটোগ্রাফারের কাঙ্খিত সাবজেক্ট আলাদা করে মূল্য দেয় না। এতে ধারণকৃত ছবিটি গোলমেলে মনে হয়; এতে কোন সুনির্দিষ্ট ফোকাল পয়েন্ট থাকে না। ফলে, স্পট থেকে বাসায় এসে দেখা যেতে পারে ঐ ছবিতে এমন কোন ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট নাই যাতে তার চোখ আটকে যেতে পারে।তাই, অভিজ্ঞ ফটোগ্রাফারগণ সাধারণতঃ আগেই সাবজেক্টকে নির্ধারণ করেন, ফোকাল লেন্থ বেছে নেন অথবা, সাবজেক্টকে ফ্রেমের এমন জায়গাতে রাখেন যাতে তার সাবজেক্টটি ফ্রেমের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। আর এভাবেন আপনি আপনার ভিউয়ারদেরকে সহজে বোঝাতে পারবেন, আপনার ফ্রেমের কোনটি সাবজেক্ট বা ফ্রেমের আকর্ষনের বিষয় কোনটি। ছবি ফ্রেমিং করার সময় দৃশ্যপটের অন্যান্য জিনিষগুলো ফ্রেমের ভিতরে চলে আসে, সেগুলোকে ব্যাকগ্রাউন্ডে পাঠিয়ে দিন অথবা আপনার ছবির ভিতর দিয়ে যে গল্প বলার চেষ্টা করছেন সেটিকে/সেগুলোকে সেই গল্পের অংশ করে নিন।
সিম্পল কম্পোজিশনে মধ্যে সিল্যুয়েট, টেক্সচার এবং প্যাটার্ন খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়।
এই রুলটি কেন কার্যকরী
শট যত সিম্পল হবে, প্রভাব (impact) তত বেশী কার্যকর হবে।- ছবির ফ্রেম থেকে অনাকাঙ্খিত এলিমেন্টকে সরিয়ে রাখতে সাবজেক্টের কাছাকাছি এগিয়ে যান।
- সিল্যুয়েট এবং শেপ সাবজেক্টকে শক্তিশালী করে।
- দেখুন, বেলুনের ঘুর্নায়মান লাইন চোখকে সহজেই ফ্রেমের মধ্যে আটকে রাখছে
রুল ২ – সাবজেক্ট দিয়ে ফ্রেম পূর্ণ করে ফেলুন
যখন বড় কোন দৃশ্যকে আপনি শ্যুট করতে প্রস্তুত, অনেক সময় মনস্থির করা যায় না যে, ফ্রেমের মধ্যে সাবজেক্টকে কত বড় রাখব এবং লেন্সের ফোকাল লেন্থ কতখানি জুম করা উচিত। সত্যি বলতে কি, ফ্রেমের একপাশে সাবজেক্টকে রেখে ফ্রেমের বেশির ভাগ এলাকা জুড়ে ফাঁকা রাখাটা সচরাচর করা ফটো কম্পোজিশনের একটি জনপ্রিয় ভুল। এতে সাবজেক্টকে ছোট ও গুরুত্বহীন হিসাবে উপস্থাপিত হয়; ফলে দর্শকগণ ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না তারা আসলে ফ্রেমের কোনটি দেখবেন।এই ধরণের সমস্যা থেকে বাঁচতে লেন্স ঘুরিয়ে যতটা সম্ভব জুম করুন যাতে আপনার ইন্টারেস্টিং সাবজেক্টটি দিয়ে ফ্রেমের বড় একটা অংশ পূর্ণ করে ফেলতে পারেন, অথবা, নিজেই সাবজেক্টের কাছে চলে যান। প্রথম এ্যাপ্রোচের প্রয়োগের ফলে ফটোফ্রেমটি ফ্ল্যাট হয়ে যাবে এবং এর একটি সুবিধা আছে; তা হল, ফ্রেমে কি রাখবেন বা ছেটে ফেলবেন, সে বিষয়ে আপনার পূর্ব নিয়ন্ত্রণ পাবেন। আর, আপনি যদি নিজেই সাবজেক্টের কাছাকাছি যেতে পারেন, সেটা ছবির দেখবার ভঙ্গীতে অন্য এক ধরণের পারস্পেক্টিভ তৈরী অরে।
এই রুলটি কেন কার্যকরী
আপনার সাবজেক্টকে ফুটিয়ে তুলতে যতটা গুরুত্ব দেয়া উচিত, সেটাই দিন- ফ্রেম পূর্ণ করার মাধ্যমে সাবজেক্টকে বড় দেখায় এবং অনাকাঙ্খিত বিষয়বস্তু বাদ চলে যায়
- সাবজেক্টকে ফ্রেমের উপরের দিকে, ফ্রেমের একেবারে মধ্যস্থানে না রেখে ডানে বা বামে রাখলে ছবিকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়
- উঁচু-নিচু পাহাড়ের “S” শেপ কার্ভের লিডিং লাইন ছবিতে দর্শকের চোখকে ফ্রেমের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় নিয়ে যেতে পারে
রুল ৩ – এ্যাসপেক্ট রেশিও (Aspect ratio)
ছবি তুলতে তুলতে অনেক সময় ছবির ধরণে বৈচিত্রহীনতা চলে আসে; শটের পর শট একই ছবি তুলছি; দেখা যাচ্ছে ল্যান্ডস্কেপ মুডে ছবি তুলছি তো তুলছিই। শটে বৈচিত্র আনতে হবে। মাঝে মাঝে প্রোট্রেইট মুডে ছবি তুলুন। একই সাবজেক্টের ল্যান্ডস্কেপ ও প্রোট্রেইট – দুই মুডেই ছবি তুলুন। সাবজেক্টের একাধিক শট নিন; কোনটাতে পজিশন পরিবর্তন করে, কোনটাতে জুম করে তুলুন। এছাড়াও ফ্রেমে ড্রামা আনতে শটে ক্যামেরার সেটিং পরিবর্তন করতে পারেন। এ ছাড়াও পোস্ট প্রসেসিং করার সময় ফ্রেমকে ল্যান্ডস্কেপ ও প্রোট্রেইট, উভয় দিকে ক্রপ করেও ছবিতে বৈচিত্র আনতে পারেন।ছবি তুলবার সময় ফটোগ্রাফির গ্রামার ঠিক রেখে সব সময় সাবজেক্টের ছবি তোলা সম্ভব হয় না। সব সময় এমন ভাবে ছবি উঠানোর কথা চিন্তা করা, নিতান্তই কাকতলীয় ব্যাপার হয়ে যাবে। তবে, চেষ্টা করা উচিত ল্যান্ডস্কেপের জন্য ১৬:৯ এ্যাসপেক্ট রেশিও ঠিক রেখে ছবি তোলা বা ক্রপ করা।
এই রুলটি কেন কার্যকরী
কোন ফরম্যাটে ছবি ভাল ভালবে – এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে – দুই ভাবেই শট নিয়ে রাখুন।- সাবজেক্ট খুব বেশি লম্বা হলে পরে পোস্ট-প্রসেসিং এ ক্রপ করে নিতে পারবেন। ক্যামেরার হাই রেজুলেশনের সেন্সরকে ধন্যবাদ, কারণ এর কল্যাণে ক্রপ করা এখন সহজ হয়ে গেছে।
- ক্যামেরাকে একটু উপর থেকে শট নিলে ভিন্ন পারস্পেক্টিভের ছবি পাওয়া যায় – এমনভাবে শট নিলে ছবি এমনিতেই ভাল লাগবে – দর্শকরাও ছবিতে নতুন কিছু খুঁজে পাবেন।
- আপনার ক্যামেরার এ্যাস্পেক্ট রেশিও’র ব্যাপারটি মাথায় রাখা বেশ জরুরী, কারণ যে মিডিয়াতে প্রিন্ট করতে যাচ্ছেন – তার এ্যাস্পেক্ট রেশিও ক্যামেরা থেকে ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক।
রুল ৪ – ছবির কেন্দ্রস্থল পরিহার করুন (Avoid the middle)
যারা নতুন ফটোগ্রাফি শুরু করেন, কম্পোজিশন সম্পর্কে তাদের ধারণা না থাকার কারণ সকল সাবজেক্টকে ফ্রেমের মাঝে রেখে ছবি তোলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু, এতে যে ছবি পাওয়া যায়, তা নিতান্তই নিরশ ও একঘেয়ে। এই ধরণের পরিস্থিতি থেকে মূল্যবান মুহূর্তের ছবিকে আকর্ষণীয় করতে “রুল ওব থার্ডস” (Rule of Thirds) কম্পোজিশন প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই কম্পোজিশন রুলে ছবির ভার্টিক্যাল ও হরাইজন্টাল দিকে তিনটি কাল্পনিক ভাগে ভাগ করা হয় এবং আপনার সাবজেক্টকে এই সকল কাল্পনিক রেখার ইন্টারসেকশনগুলোতে রেখে ছবি তুলতে হবে। ফটোগ্রাফিতে এই কম্পোজিশনটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।আমরা কিছুক্ষণের জন্য এই কম্পোজিশনকে দূরে রেখে দেই। তার পরিবর্তে আপনার সাবজেক্টকে ফ্রেমে মাঝখান থেকে সরিয়ে নিয়ে নিন; এবার আপনার ফ্রেমে যে সব এলিমেন্ট রয়েছে তার সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে এক জায়গায় স্থির করুন; খেয়াল রাখতে হবে ব্যাকগ্রাউন্ডের কন্ট্রাস্টিং কালার ও আলোর সাথে সামঞ্জস্যতাও রাখতে হবে। ছবিতে এই ধরণের ভিজ্যুয়াল ব্যালান্স রাখার সময় ফটোগ্রাফির কোন রুল মেনে চলার দরকার নাই। ছবিতে অন্যান্য জিনিষের সাথে সাবজেক্টকে ব্যালান্স করার ব্যাপারে এই ধরণের প্র্যাকটিস থেকে আপনি নিজে নিজেই কম্পোজিশন শিখে যাবেন। নিজের উপরে বিশ্বাস রাখুন – কোন দৃশ্যের সাথে সাবজেক্টকে কিভাবে ব্যালান্স করবেন, তা আপনি নিজের শিখতে পারবেন।
এই রুলটি কেন কার্যকরী
ছবিতে ব্যালান্স এনে শটকে আরও আকর্ষনীয় করে তোলে- নিজের শুটিং স্ট্যাইলকে “রুল অব থার্ডস” এর গোলাম বানিয়ে ফেলা অনুচিত। খেয়াল রাখবেন, যাতে করে আপনার সাবজেক্টকে ফ্রেমের একেবারে মাঝে রাখবেন না।
- ছবিতে সাবজেক্টের সাথে অন্যান্য ইলিমেন্টের মধ্যে একটা “ব্যালান্স” বজায় রাখার চেষ্টা করুন। ছবিতে দেখুন কিভাবে মহিলার ছবিকে ফোরগ্রাউন্ডে প্লেস করা হয়েছে।
- ফ্রেমে এমন ইলিমেন্টকে (converging lines) রাখুন যেটি দর্শকদের চোখকে ফ্রেমে থাকা অন্য কোন ইন্টারেস্টিং জিনিষের দিকে নিয়ে যায়।
রুল ৫ – লিডিং লাইনস (Leading lines)
ফটোগ্রাফারের ছবি যদি দর্শকদের মনোযোগকে আকর্ষণ করতে না পারে, তবে ধরে নেয়া যায় ঐ ছবির ফোকাস পয়েন্ট নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হবেন। দর্শকের চোখ ছবির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছোটাছুটি করতে থাকবে। ফটো কম্পোজিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুল হল – লিডিং লাইন্স। ছবির ফ্রেমে এমন একটা প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম বিষয়বস্তু থাকবে যেটি দর্শকদের চোখ বা মনোযোগকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে আকর্ষণ করে একটি ফোকাস পয়েন্টে নিয়ে যাবে।আবার দু’টি লিডিং লাইন্স ফ্রেমের একটি বিন্দুতে মিশে গিয়ে তৈরী হয়ে পারে আকর্ষণীয় ফোকাস পয়েন্ট (converging lines)। এই ধরণের দ্বৈত পয়েন্টের মেলবন্ধন ছবিতে একটি থ্রি-ডি ডেপথ (three-dimensional depth) তৈরী করে ছবিতে নিয়ে আসে বিশেষ ধরণের পারস্পেক্টিভ।
আশে-পাশে তাকালেই ফটোগ্রাফারা এমন লাইন লক্ষ্য করে থাকবেন – ওয়াল, বেড়া, রাস্তা, বিল্ডিং এবং টেলিফোন তারের লাইন থেকে এমন কম্পোজিশন পাওয়া সম্ভব। “রুল অব থার্ডস” কম্পোজিশনে অফ-সেন্টারে একজন সাবজেক্ট যে দিকে তাকিয়ে আছেন, সে দিকের লিডিং লাইন ফ্রেমে রেখে শট নিলে এমন ছবি পাওয়া যেতে পারে।
এই রুলটি কেন কার্যকরী
ছবির কম্পোজিশনের ক্ষেত্রে লাইন একটি গুরুত্বপূর্ণ এলিমেন্ট।- যখন এমন একটি ছবিতে বেশ জোড়ালভাবে কোন লিডিং লাইনের উপস্থিতি থাকে, তখন দর্শকগণ এমন ছবিতে না তাকিয়ে থাকতেই পারবেন না। তাদের দৃষ্টি ঐ ছবিতে নিবন্ধ হবেই।
- ছবিতে লক্ষ করুন – এর থামগুলো একটি লিডিং লাইন তৈরী করে ফ্রেমের মধ্যে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে – এতে এমন একটি তৈরী হয়েছে যা প্রাকৃতিকভাবেই আপনার চোখকে ছবির মধ্যে ধরে রাখবে।
- আর, এখাবে যে বেড়া দেখা যাচ্ছে – সেটি দর্শকদেরকে একটি ফোকাল পয়েন্টে নিয়ে যাচ্ছে – যা এটি মানুষের আকৃতি।
রুল ৬ – কোনাকুনি লাইন (diagonals)
সাধারণতঃ ছবির কম্পোজিশনে সমান্তরাল লাইনের প্যাটার্নের ব্যবহার ছবিতে একটা শান্ত-শিষ্ট, “স্থির” (static, calm) ভাব নিয়ে আনে; অন্যদিকে লম্বালম্বিভাবে কোন এলিমেন্ট ছবিতে স্থায়ীত্ব ও দৃঢ়তা (permanence and stability) আনয়ন করে। আপনার ছবিতে নাটকীয়তা আনতে ব্যবহার করুন ডায়াগোনাল লাইন – এই ধরণের এলিমেন্ট ছবিতে করে তোলে প্রাণবন্ত, বা, করে তোলে অস্থিরতার প্রতিচ্ছবি।এই জন্য খুব বেশি খাটা-খাটুনির প্রয়োজন নাই – শুধুমাত্র ছবির ফ্রেমকে ওয়াইড করে নিন আর সাবজেক্টকে ফ্রেমের যে কোন এক পাশে নিয়ে আনুন। ওয়াইড এ্যাঙ্গেল দৃশ্যের দৃশ্যপটে অনেক কিছু এটে যায় বিধায় এতে ডায়াগোনাল লাইন নিয়ে আনা সহজ হয়। আর, একটা ডেডিকেটেড ওয়াইড এ্যাঙ্গেল লেন্স ব্যবহারের সময় ক্যামেরা একটু উপর-নিচ করে ফ্রেমের মধ্যে দৃশ্যের ভিন্নতা নিয়ে আসা যাবে।
এই রুলটি কেন কার্যকরী
ডায়াগোনাল লাইন ব্যবহারে ছবিকে প্রাণবন্ত ও নাটকীয় করে ছবিতে শক্তিশালি মেসেজ প্রকাশ করে- ডেডিকেটেড ওয়াইড এ্যাঙ্গেল লেন্সের বিস্তৃত দৃশ্যপটের কারণ ছবিতে ডায়াগোনাল ফুটিয়ে সহজ।
- স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ (viewpoint) থেকে নিচু হয়ে ক্যামেরার লেন্সকে উঁচু করে ছবির শট নিলে এতে স্বাভাবিকভাবে ডায়াগোনাল দৃষ্টিকোন পাওয়া যায়।
- এখানে দেয়া ছবিটি দেখলে খেয়াল করবেন, ফটোগ্রাফার দর্শকদের দৃষ্টি সেন্ট পল’র ক্যাথেড্রালের উপর নিবন্ধ রাখার জন্য মাঝের স্থানের পুরোটাই ফাঁকা ছেড়ে দিয়েছেন।
রুল ৭ – পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা রাখুন
একটা ছবি সময়ের একটি বিশেষ মুহূর্তকে স্থিরভাবে ধারণ করে রাখে; তথাপি একটি ছবির মধ্যে দিয়ে শক্তিশালী চলমান ঘটনাকে ধারণ করা যেতে পারে। ছবির একটা ফ্রেম দেখে আমরা ধারণা করতে পারি যে, এই ছবিতে কি বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়েছে এবং ছবিতে যদি সামঞ্জস্য মাত্রায় ফাঁকা স্থান না থাকে – তবে দর্শকদের কাছে ছবিটিকে অসম্পূর্ণ বা সমতাহীন (imbalance) মনে করতে পারে ।আবার, চলমান সাবজেক্টের ক্ষেত্রে ফ্রেমে এমন এফেক্ট তুলে ধরা তুলনামূলকভাবে বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। পোর্ট্রেইটের কথা যদি উদাহরণ হিসাবে ধরা হয়, দেখা যায়, আমি যখন কোন পোট্রেইটের দিকে তাকাই তখন সাবজেক্ট যে দিকে তাকিয়ে আছে সেটা লক্ষ্য করে থাকি – চিন্তা করে দেখেন, এই ব্যাপারটা ফুটিয়ে তুলতে হলে ফ্রেমে কিছুটা ফাঁকা জায়গা বা ব্রিদিং স্পেস (breathing space) রাখার দরকার হয়।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, এই দুই ধরণের শটের ক্ষেত্রে সাবজেক্টের পিছনে নয়, বরং ফ্রেমের সামনের দিকে সর্বদা কিছু জায়গা ছেড়ে দিতে হয়।
এই রুলটি কেন কার্যকরী
কারণ, ফ্রেমের দ্রুত চলমান গাড়িটিই ছবির মূল আকর্ষণ… এটি কোন এক্সিডেন্টের ছবি নয়।- ছবিতে গাড়ির সামনের অংশে জায়গা ছাড়তে হবে, গাড়িটি যে চলমান – তা ফুটিয়ে উঠানোর জন্য এই স্পেসটুকু প্রয়োজন; নচেৎ কম্পোজিশন ভুলে ছবিটি বাতিল হয়ে যাবে।
- খেয়াল করুন, ছবিতে থাকা রাস্তাতে থাকা রোড ডিভাইডারের সাইনগুলো সাবজেক্টের গতিশীলতা জোড়ালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
- ফটোগ্রাফার ছবির ফ্রেমকে একটু কাঁত করে তুলেছেন – তাতে ছবির ডায়াগোনাল এ্যাঙ্গেলের কারণে ছবির সার্বিকভাবকে আরও জোড়ালো করেছে।
রুল ৮ – ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড
ছবি তুলবার সময় শুধু সাবজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকলেই হবে না – ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে কি হচ্ছে বা কি থাকছে – তার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এই জন্য ছবি দৃশ্যপটকে যত দূর সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করুন। সাবজেক্ট দিয়ে ফ্রেমের বেশির ভাগ অংশ পূর্ণ করে ফেলাটা – এই কাজের একটি প্রচলিত ট্রিক। ছবি তুলবার সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে কি থাকছে, তা সর্বদা বাদ দেয়া যায় না সঙ্গত কারণ, কিন্তু ফটোগ্রাফার, বা সাবজেক্ট এর অবস্থান পরিবর্তন করে বা ফোকাল লেন্থ পরিবর্তন করে ব্যাকগ্রাউন্ডকে নিয়ন্ত্রন করা যায়।এমন অনেক মুহূর্ত আসবে যখন আপনি বুঝতে পারবেন যে, সাবজেক্টের পিছনে থাকা কোন ব্যাকগ্রাউন্ডের এলিমেন্টকে বাদ দিলে ছবি সুন্দর হবে; বা কোন এলিমেন্টকে একেবারে বাদ দিতে হবে। আবার, এই কাজটাই লেন্সের ওয়াইড ফোকাল লেন্থ ব্যবহার করতে হবে, না, বেশি ফোকাল লেন্থ এর সাথে ওয়াইড এ্যাপারচার ব্যবহার করে ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে অবাঞ্ছিত অংশকে বোকেহ’র সাথে ব্লার করে মিশিয়ে দিতে হবে।
এই সব কিছু নির্ভর করছে, আপনি ছবির মধ্য দিয়ে যে গল্প বলার চেষ্টা করছেন তার সাথে ব্যাকগ্রাউন্ডের এলিমেন্টগুলো সম্পর্কিত কিনা! উপরে এখানে যে ছবিটি দেখানো হয়েছে, তাতে দর্শকের আকর্ষণকে সাবজেক্টের মুখের ভাবকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার জন্য ব্যাকগ্রাউন্ডকে ওয়াইড এ্যাপারচার ব্যবহার করে একেবারে ঘোলাটে করে দেয়া হয়েছে।
এই রুলটি কেন কার্যকরী
ছবি সাবজেক্ট যতই নিরশ হোক না কেন, ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডকে সঠিকভাবে নির্ধারণ করে ফুটিয়ে উঠাতে হবে।- ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা সাবজেক্টকে গুরুত্বহীন করে ফেলা সকল এলিমেন্টকে সরিয়ে দিয়ে লেন্সের ফোকাল লেন্থ বাড়িয়ে ওয়াইড এ্যাপারচার ব্যবহার করুন।
- ফ্রেমে সাবজেক্টকে বেশিরভাগ অংশ জুড়ে পূর্ব করুন – অনাকাঙ্খিত ও ডিস্ট্রাক্টিং এলিমেন্টগুলো ফ্রেমের যত কম অংশে দৃশ্যমান থাকবে ততই ভাল।
- ক্যামেরা সঠিক পজিশনে রাখাটাও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় রাখতে হবে, কারণ, ব্যাকগ্রাউন্ডের অনাকাঙ্খিত এলিমেন্ট ফ্রেমের রাখা-না-রাখা এর উপরে অনেকাংশে নির্ভর করে থাকে।
রুল ৯ – রং এর ক্রিয়েটিভ ব্যবহার
উজ্জ্বল প্রাইমারী রং মানুষের চোখকে বেশি আকর্ষণ করে, বিশেষ করে এদের সাথে যখন ম্যাচিং করা কাছাকাছি বা বিপরীতধর্মী (contrasting) আরও কিছু রং থাকে – তখন তা আরও মনোগ্রাহী হয়ে উঠে। ছবিতে কনট্রাস্টিং কালার তৈরী করার আরও উপায় আছে – উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মনোক্রম ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে উজ্জ্বল কনট্রাস্টিং কোন রং এর মিশেল যোগ করা। তবে মনে রাখা দরকার যে, কনট্রাস্ট তৈরীর জন্য খুব বেশী বিপরীত ধর্মী রং না হলেও চলবে।আবার, ছবিতে একটি মাত্র রং এর ব্যবহার করেও মুন্সিয়ানার সাথে ভাল ছবি উপস্থাপন করা যায়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, বিস্তির্ণ ফসলের ক্ষেতের ছবি সেখানে প্রায় কাছাকাছি রং এর শস্যের রং একে অপরের সাথে মিশে গিয়ে হালকা রং এর অপরূপ ল্যান্ডস্কেপ ছবি পেতে সাহায্য করে।
এই ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, ছবিতে সাবজেক্টের গুরুত্বকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য ও আলাদা বৈশিষ্ট্যে উপস্থাপন করার জন্য কিভাবে ফ্রেম থেকে অনাকাঙ্খিত রং সমূহকে নিপূণভাবে বাদ দেয়া যায়।
এই রুলটি কেন কার্যকরী
ফটো কম্পোজিশনের এই রুলের ব্যবহারে কনট্রাস্টিং রং এর ব্যবহারে এ্যাবস্ট্র্যাক্ট শট তৈরী করা যায়।- নীল এবং কমলা, বা, হলুল রং কমপ্লিমেন্টারী রং হিসাবে সুপরিচিত এবং এগুলো ছবিতে রং এর জোড়ালো কন্ট্রাস্ট তৈরী করে।
- ছবিতে রং এর সমারোহ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ফ্রেমিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- কেন্দ্র-বিমুখ (off-center) কম্পোজিশনের ক্ষেত্রে কমলা (orange) রং এর দেয়াল সত্যিই একচ্ছত্র গুরুত্ব রয়েছে।
রুল ১০ – প্রয়োজনে রুল না মানাটাও রুল
ফটো কম্পোজিশন অল্প কথায় বোঝাতে গেলে বলতে হয়, এটি একটি “ভিজ্যুয়াল ভাষা” (visual language) – এর সুচিন্তিত ব্যবহারের মাধ্যমে একজন ফটোগ্রাফার তার ছবির মধ্যে দিয়ে দর্শকদের কাছে একটা বার্তা (message) পৌঁছে দেন। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে, আমরা যেমন আমাদের লেখনির মাধ্যমে মানুষের মনে জোরালো ও তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারি, তেমনি ভাবে ছবির কম্পোজিশন বেছে নেওয়ার সময় কম্পোজিশনের প্রচলিত রুল না মেনেও মানুষের মনে এমন জোরালোভাবে দাগ কাটা সম্ভব।কাকতলীয়ভাবে এমনটা ঘটলে যদিও সেটার দূর্ঘটনা হিসাবে গণ্য হবে! কিন্তু, যখন একজন ফটোগ্রাফার কম্পোজিশনের রুলগুলো ভালভাবে বুঝতে পারবেন এবং প্রয়োজনের খাতিরেই উদ্দ্যেশ্যমূলকভাবে কম্পোজিশনের রুল না মেনে ছবি তুলবেন, তখন ছবিতে ইন্টারেস্টিং কিছু অবতারণা করার জন্য এটা করা হবে। উপরে John Powel এর একটি ছবি দেখা যাচ্ছে যেখানে তিনি এমন কদাচিৎ ছবি তুলে থাকেন যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে কম্পোজিশনের কোন রুল মেনে চলার অনীহা প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে।
মনে রাখতে হবে – এখানে কম্পোজিশনের যতগুলো রুল সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে, খুঁজলে এমন অনেক ছবি পাওয়া যাবে যেখানে এই রুলগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে; কিন্তু, তারপরে সেগুলোর শিল্পমান কোন অংশে কম নয়।
এই রুলটি কেন কার্যকরী
কদাচিৎ রুলের বাইরে গিয়ে দৃষ্টান্তমুলক ও শিল্পমান সম্পন্ন ছবি তুলে তাক লাগিয়ে দেয়া সম্ভব।- ছবিতে থাকা ভদ্রমহিলা এমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যা সম্পূর্ণভাবে ফ্রেমের বাইরে গিয়ে ঠেকেছ যেখানে দর্শকদের দৃষ্টি কখনই অনুসরণ করতে পারবে না – ছবিতে এটাই ফটোগ্রাফারের কারিশমা!
- আর, ছবির ভদ্রলোকের দৃষ্টিরেখা তার সামনে থাকা ভদ্রমহিলার অবস্থানের সাথে একটি জোরালো কাল্পনিক রেখার সাথে সংযোগ বোঝাচ্ছে।
- ভদ্রমহিলার অফ-সেন্টার পজিশন ছবির সাথে খুব ভালভাব খাপ খেয়েছে, শটের ছবির পিছনে থাকা ভদ্রলোকের অবস্থানের সাথে একটা ব্যালান্স তৈরী করেছে।
0 Comments