কি কি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয় ডিএসএলআর (DSLR) ক্রয় এর সময়


শখ কিংবা প্রফেশন যে কারনেই ডিএসএলআর (DSLR) কিনতে মনস্থির করেন না কেন, বাজেট এর মধ্যে সেরাটি পেতে কিছু কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়। এ ব্যাপারগুলো আগে থেকে জানা থাকলে, আপনার মনের মত ডিএসএলআর পাবার ব্যাপারে সম্ভাবনা বেশি থাকে।
এই বিষয়গুলো নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করার চেষ্টা করলাম এই পোস্টে।

কি কি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয় ডিএসএলআর (DSLR) ক্রয় এর সময়

একটা ডিএসএলআর (DSLR) এর জন্য…

ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনতে আগ্রহীদের জন্য সবচেয়ে জরুরী বক্তব্যটি হলো, কেনার আগে অবশ্যই ভেবে নিন আপনার আসলেই ডিএসএলআর ক্যামেরা দরকার কিনা। ভালো ছবি তোলার জন্য বাজারে অনেক ভালো মানের পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরা আছে, যার অটো মুড ব্যবহার করে অনেক সহজে চমৎকার ছবি তোলা সম্ভব। ডিএসএলআর তাদেরই প্রয়োজন, যাদের কেবল ছবি তোলা নয় বরং ছবি তোলা শেখার প্রতি আগ্রহ আছে।

জনপ্রিয় ব্র্যান্ড থেকে কিনুন

এবার যদি ডিএসএলআর কিনতেই হয় তবে সবচেয়ে প্রচলিত ব্র্যান্ডগুলোর দিকেই বেশি মনোযোগ দিন। এ সময়ের ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ক্যানন, নিকন, সনি, প্যানাসনিক, পেনট্যাক্স ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এতে পরবর্তীতে লেন্স বা ক্যামেরা সংশ্লিষ্ট আনুষাঙ্গিক যন্ত্রাংশগুলো পাওয়া সহজ হবে।

বেশি মেগাপিক্সেল-ই শেষ কথা নয়

বেশি মেগাপিক্সেল থাকলে ছবি ভাল হবে, এই ভুল ধারণাটি এখনই বাদ দিন। এই এককটি তোলা ছবিটির আকার নির্ধারণ করে দেয় মাত্র। অর্থাৎ মেগাপিক্সেল বেশি হলে ছবিটি সাধারণ অবস্থার চেয়ে বড় করে প্রিন্ট করলে বা ডিজিটালি জুম করলেও তার মান ভালো থাকবে।

সেন্সর

সেন্সরের আকার ছবির মান নির্ধারণ করে। সেন্সর যত বড় হবে, ছবি স্পষ্ট ও ঝকঝকে হবার পাশাপাশি তার কারিগরী মান তত ভাল হবে। সুতরাং কেনার সময়ে এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখুন। আবার, বড় সেন্সরসহ ক্যামেরাগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হয়ে থাকে, এই বিষয়টিও মাথার মধ্যে রাখতে হবে।

লাইভ ডিসপ্লে

আপনার ক্যামেরাটিতে লাইভ ভিউ ডিসপ্লে আছে কিনা, দেখে নিন। এতে ছবি তোলার আগেই ছবিটি দেখতে কেমন হবে তা দেখা যায়। নতুন ফটোগ্রাফারদের জন্য এটি খুবই প্রয়োজনীয় ফিচার। লাইফভিউতে ছবি তুলতে অনেক বেশি ব্যাটারী খরচ হয়, এটিও মাথার রাখতে হবে।

ভিডিও

ইদানীং সময়ের প্রায় সব ডিএসএলআর দিয়েই ভিডিও শ্যুট করা যায়। ক্যাননের ভিডিও ধারণের ক্যাপাবিলিটি তুলনামূলকভাবে ভাল, অনেক বেশি রেসপনসিভ। আপনার নির্বাচিত মডেলটির ভিডিও করার জন্য কি কি ফিচার আছে জেনে নিন।
লক্ষ্য রাখুন, প্রতি সেকেন্ডে কতগুলো ফ্রেম ধারণ করা যায় বা এক্সটার্নাল মাইক লাগানো যায় কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলোর উপর।

কিনবার পূর্বে একটু পড়াশোনা

এছাড়াও ক্যামেরা কেনার আগেই প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ফিচারগুলো যেমন: ফোকাল পয়েন্ট, শাটার স্পিড, ফ্রেমের আকার, ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার, অটোফোকাস ইত্যাদি সম্পর্কে একটু লেখাপড়া করে নিন। এসকল ফিচারগুলো আপনার ছবি তোলা ছবিটিকে আরও সহজ এবং সুন্দর করে তুলতে পারে।

ডিএসএলআর (DSLR) এর জন্য কি লেন্স কিনব?

ডিএসএলআর ক্যামেরা লেন্সসহ এবং লেন্স ছাড়া দুইভাবেই বিক্রি হয়ে থাকে। তাই ক্যামেরা কেনার আগেই তার সঙ্গে আনুষাঙ্গিক কি কি পাচ্ছেন তা খেয়াল রাখুন। ব্যাটারী, চার্জার এবং কাধে ঝোলানোর স্ট্র্যাপ ক্যামেরার সাথেই পাওয়া যায়। তবে ব্যবহারের আগে মেমরী কার্ড আলাদা করে কেনার প্রয়োজন হবে। ক্যামেরা সুরক্ষিত রাখতে ক্যামেরার ব্যাগটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কিনে ফেলুন।
লেন্স কেনার ব্যাপারে বুঝে-শুনে সিদ্ধান্ত নিন। বেশিরভাগ সময়ে ক্যামেরার সঙ্গেই একটা বেসিক লেন্স পাওয়া যায়। এটা দিয়ে প্রাথমিকভাবে ছবি তোলা গেলেও ডিএসএলআর-এর পুরোটা ব্যবহার করতে গেলে নতুন লেন্স কেনা লাগবেই।
সাধারণত: ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির জন্য ওয়াইড এ্যাঙ্গেল লেন্স (১০-২০ এমএম), প্রোট্রেট ফটোগ্রাফির জন্য বড় এ্যাপারচারের প্রাইম লেন্স (৮৫ এমএম), ছোট পোকা-মাকড়ের ছবি তুলতে আবার আলাদা ধরনের ম্যাক্রো-ক্যাপাবিলিটি আছে এমন লেন্স (১০৫ এমএম ম্যাক্রোলেন্স) কিনতে হয়। বার্ড ফটোগ্রাফির জন্য সুপার জুম লেন্স (২০০-৫০০ এমএম, বা ১২০০এমএম) কিনবার প্রয়োজন পড়ে।
ফটোগ্রাফির ধরণ অনুযায়ী লেন্স কিনুন।

অনুমোদিত শোরুম থেকে কিনুন

সবশেষে ক্যামেরা কেনার আগে তার কোন গুণগত ত্রুটি আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখুন। সবচেয়ে ভালো হয়, কোন অভিজ্ঞ লোক পরিচিত থাকলে, ক্যামেরা কেনার সময় তাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া। এছাড়া নিজেও ক্যামেরা হাতে নিয়ে দেখুন, তার ভার ঠিক আছে কিনা, বা ধরতে স্বচ্ছন্দ্য বোধ করছেন কিনা।
যে ব্র্যান্ডের ডিএসএলআর (DSLR) ক্যামেরা কিনতে চাইছেন, তার অনুমোদিত শোরুম থেকে কিনলে, ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

মেমরি কার্ড

ক্যামেরা ছবিগুলো জমা রাখার জন্য এসডিকার্ড প্রয়োজন হয়। ভাল ব্র্যান্ডের ও দ্রুত গতির এসডি কার্ড কিনুন। এতে একটি ছবি তোলার পর পরবর্তী ছবি তুলবার জন্য যে সময়ের পার্থক্য, তা অনেক কমে আসবে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ ছবি মোমেন্ট মিস করার সম্ভাবনাও কমে আসে।
স্যানডিস্ক, লেক্সার, টুইনমোস, প্রভৃতি ব্র্যান্ডের মেমোরি কার্ড পাওয়া যায়। ভাল স্পীডের মেমোরি কার্ড সাধারণ ৯০ এমবি/সেকেন্ডে হয়ে থাকে। এদের মূল্য তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। তবে, পারফরমেন্সের কথা মাথায় রাখলে এগুলোর চেয়ে কম স্পীডের কার্ড কিনলে পরে মাথা চাপড়াবেন।

ক্যামেরার ব্যাগ

আপনি যদি পুরনো ক্যামেরা কেনেন তবে তার সাথে ব্যাগ না থাকার সম্ভাবনাই বেশী। ব্যাগ আপনার ক্যামেরাকে পড়ে যাওয়া ও অন্যান্য ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবে।

ফাঙ্গাস, সিলিকা জেল, এয়ারটাইট বক্স এবং ড্রাই বক্স এর কাহিনী

ক্যামেরার আভ্যন্তরীন কারিগরী অত্যন্ত জটিল। এর পার্টস ও লেন্স আর্দ্রতার হ্রাস-বৃদ্ধির প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাই, ক্যামেরাকে জলীয় বাস্পমুক্ত বাক্সে অথবা স্পেসালাইজড ড্রাই বক্সে রাখা উচিত।
বাজার থেকে এয়ারটাইট প্লাস্টিক বক্স কিনে তার মধ্যে সিলিকা জেল দিয়ে রাখুন। তারপর এর মধ্যে ক্যামেরা ও আনুষাঙ্গিক এক্সেসরিজগুলো রাখুন। খেয়াল রাখুন, সিলিকা জেলের পিলেটগুলো যেন ক্যামেরাকে স্পর্শ না করে। এই প্যাকেজে খরচ কম পড়বে।
এছাড়াও, ক্যামেরার জন্য ড্রাইবক্স কিনতে পারেন। এটি বিদ্যুৎচালিক বিশেষায়িত বাক্স যার মধ্যে হিটারের তাপমাত্রাকে ব্যবহার করে ঐ বাক্সের জলীয়বাষ্পকে নিয়ন্ত্রণ করে ক্যামেরা ও এর এ্যাক্সেসরিজগুলোকে ফাঙ্গাস থেকে রক্ষা করা হয়।

পরিষ্কার, খোলামেলা ও পর্যাপ্ত আলোকময় স্থানে সংরক্ষণ

ক্যামেরা ও লেন্সকে কখনও কাল কাপড় দ্বারা ঢেকে সংরক্ষণ করবেন না, বা আলমারীর মধ্যে রাখবেন না। ক্যামেরাকে এয়ারটাইট বাক্সে বা ড্রাইবক্সে খোলামেলা স্থানে রাখুন, যেখানে পর্যাপ্ত আলো রয়েছে।

ডিএসএলআর (DSLR) কোথা থেকে কিনবেন

ক্যানন ক্যামেরার অনুমোদিত ডিলার: জে.এ.এন. এ্যাসোসিয়েটস ফেসবুক পেজ
নিকন ক্যামেরার অনুমোদিত ডিলার: ফ্লোরা লিমিটেড ফেসবুক পেজ
সনি ক্যামেরার অনুমোদিত ডিলার: র‌্যাঙ্গস ফেসবুক পেজ
পেনট্যাক্স ক্যামেরার অনুমোদিত ডিলার: এমিনেন্স ফটোগ্রাফিক ফেসবুক পেজ
আপনার জন্য সঠিক ক্যামেরাটি কিনতে সেরা ডিএসএলআর রিভিউগুলো পড়ুন। তারপর একদিন আপনার নতুন বা পুরনো ডিএসএলআর ক্যামেরাটি কিনে ফেলুন।

Post a Comment

0 Comments